আমাদের দেশের মিডিয়া খুব গর্বের সঙ্গে প্রচার করে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অমুক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে, অমুক আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ইত্যাদি। কিন্তু এদেশে যখন ইতালি বংশোদ্ভূত কোনও মহিলার বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়, যখন সবকিছুতেই আরব খোঁজা হয় তখন তার প্রতিবাদ হয়না। হ্যাঁ, আমেরিকা, ব্রিটেনের বহু নেতা মন্ত্রীর জন্ম বিদেশে হয়েছে, ভারতে সেই পরিবেশ আছে? এখানে কেউ সামান্য এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়ালেই তো তাকে ‘বহিরাগত’ বলা হয়, আর জাতপাত, ধর্মের বিষয়তো আছেই। এক সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিসরে ভারতবর্ষের মানুষকে রাখা হয়েছে। মিলাবে মিলিবের ভাবনা আজ কোথায়? কেন লক্ষ লক্ষ ভারতীয় এদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে? কেন আমেরিকা, ব্রিটেন ফেরত ডিগ্রীধারীর এদেশে বেশি কদর হয়? কেন এদেশের টাকা সুইস ব্যাংকে থাকে? ভেবেছেন কখনো? দেশকে যদি সত্যিই ভালোবাসেন তাহলে দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে, সংকীর্ণ ধর্মীয় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে মানবতার পক্ষ নিন। মানুষকে ভালোবাসা ছাড়া দেশপ্রেমী হওয়া যায়না, দেশ-সংবিধান-ধর্ম সবকিছুই মানুষের জন্য হয়েছে। তাই মানুষের জীবন জীবিকার প্রশ্নে আঘাত এলেই তীব্র প্রতিবাদ করুন।
আমাদের দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য এই যে, এখানকার রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যত আলোচনা(কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ গোপনে) করে তার কিছু অংশ যদি শান্তি,সম্প্রীতি, খাদ্য-বাসস্থান, পানীয় জল, চাকরি নিয়ে হত তাহলে দেশ বদলে যেত। একটা ধর্মীয় ইস্যু আনছে তো আরেকটা কাউন্টার দিচ্ছে, অথচ বেকারত্ব, সুদ, ঘুষ নিয়ে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র গণআন্দোলন হচ্ছে না। যে যার খুশি ধর্ম পালন করুক, কিন্তু ধর্মের নামে গুন্ডামি, মস্তানী চলবে আর তাই নিয়ে নেতা-মন্ত্রী-মিডিয়া জনগণকে পাগল করে দেবে এদিকে ক্ষুধার্ত মানুষ পথে ঘাটে মরবে-এটা চলতে পারে না।
আমি মনে করি ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য নাগরিক সমাজের জোরালো আওয়াজ দরকার, হিজাব, নবী(স:), কালি এইসব নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে, সরকারও চাইছে এইসব হোক, কিন্তু কোটি কোটি বেকার কাজ পাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে দেশব্যাপী একটা শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ হতে তো পারে! লক্ষ লক্ষ যুবক ফুল মিষ্টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে চাকরি না দেওয়ার জন্য ধন্যবাদতো জানাতে পারে!