বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকা মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে জাতির পিতার খুনিদের লালন-পালন করছে। এখনও কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে। তাকে আনার জন্য বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, আমেরিকা তাই সেই খুনিকে লালন-পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার কারবারই এরকম। শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ৫ম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নির্মম হত্যাকণ্ডের প্রসঙ্গ স্মরণ করেন। একইসঙ্গে সেই রাতে আহতদের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র ও চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে হত্যার ঘটনা নয়। এই হত্যাকাণ্ড ছিল একটি জাতির ওপর আঘাত, একটি আদর্শের ওপর আঘাত। স্বাধীনতার বিজয়ের ওপর আঘাত।
১৫ আগস্টের পর ইতিহাস বিকৃতি থেকে শুরু করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালাসহ তৎকালীন সরকারগুলোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার অবাক লাগে মাঝে মাঝে। কখনও কোনো হত্যাকা- হলে যখন আমার কাছে কেউ বিচার দাবি করে, তখন আমার শুধু মনে হয় আমার বাবা-মা ভাইদের হত্যার বিচার করতে আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে আমরা খুনিদের বিচার করতে পেরেছি। মামলা করতে পেরেছি।’ ‘১৯৮১ সালে যখন বাংলাদেশে গেছি মামলা করতে গেছি। আমার কিন্তু মামলা করার অধিকার ছিল না তখন। তখন মামলা নেয়নি।’ এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতি; তখন থেকেই তো শুরু বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। ‘তবু আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি আর জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। অন্তত তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই এই হত্যার বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে। তাকে আনার জন্য বারবার আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, আমেরিকা তাই সেই খুনিকে লালন-পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার কারবারই এরকম বলে কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যেমন একজন ড্রাগ ডিলার, বারবার পুলিশ তাকে ধরতে গেছে, পুলিশের ওপর হামলা করেছে। র্যাব ধরতে গেছে হামলা করেছে। ১৪টি মামলার আসামী এবং ড্রাগসহ ধরা পরলে পুলিশের ওপর তার গ্রুপ গুলী করে, র্যাবের ওপর গুলী করে এবং তারপরও সেও গুলী খায় মারা যায়।’ ‘তার জন্য আমাদের দেশের কিছু লোক বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে বেড়ায়। অথচ এই ড্রাগ ডিলারদের খোঁজ আনতে যেয়ে ধরতে যেয়ে আমাদেরই একজন এয়ারফোর্সের অফিসার তাকে ড্রাগ ডিলাররা হরণ করে নিয়ে যায় এবং অত্যন্ত নির্মমভাবে তাকে মারে। এই মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। এ ব্যাপারে কিন্তু এদের কোনো উদ্বেগ নেই। মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও উদ্যোগ নেই বা যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেয়। আমেরিকারও কোনো উদ্বেগ নেই। কারও কোনো উদ্বেগ নেই। কেমন একটি অদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতি, সেটিই আমার অবাক লাগে? তিনি আরও বলেন, ‘একজন কানাডায়, একজন পড়ে আছে আমেরিকায় আর দুইজন পাকিস্তানে। পাকিস্তানে রশিদ আর ডালিম। আরেকজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না, কখনও ভারতে কখনও জার্মানিতে। বিভিন্ন জায়গায় মোসলেম উদ্দিন। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। পৃথিবীর যেখানেই থাক, যেভাবেই হোক এদেরকে ধরে এনে এদেরকে সাজা অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। সেটিই আমি চাই।’ ইন্টারনেট