নেইমার ফিরেছেন দলে, সঙ্গে ফিরেছে জয় এবং উদযাপন। দ্বিতীয় পর্বে দক্ষিণ কোরিয়াকে নাস্তানাবুদ করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল। মাঠের ফুটবল কত দুর্দান্ত হতে পারে, ব্রাজিল তারই প্রমাণ দিয়ে দ. কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে। সেলেসাওদের পক্ষে এ দিন গোল পেয়েছেন ভিনিসিয়াস, নেইমার, রিচার্লিসন এবং পাকেতা। কোরিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন পাইক সেউং-হো।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শুরু থেকেই ঝড় বইয়ে দেয় ব্রাজিল। প্রথমার্ধেই চার গোল করে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ কোরিয়া ১ গোল পরিশোধ করতে পারলেও আর কোন গোল শোধ করতে পারেনি। ফলে ৪-১ গোলে হারিয়ে গেল তারা।
ব্রাজিলের চারজন ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড় ৪টি গোল করেন। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের প্রথম গোলের পর পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার। বাকি দুটে গোল করেছেন ব্রাজিলের নম্বর নাইন রিচার্লিসন ও লুকাস পাকুয়েতা।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের আক্রমণের ধার কমে আসে। আর ৮০ মিনিটের মাথায় সিউং হো পাইকের গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনে দক্ষিণ কোরিয়া।
কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪ -এ শেষ ষোলোর দ্বৈরথে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বকাপে ‘জি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউটে উঠেছে ব্রাজিল। বিপরীতে ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়ে নক আউটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
একাদশে আজ ফিরেছিলেন নেইমার। যা সেলেসাওদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দিয়েছে। গ্রুপ পর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চোট পেয়ে ৯ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি।
আজ মাঠে নামার সাথেই বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দেয়ার সংখ্যায় কাফু এবং দুঙ্গাকে ছুঁয়ে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়লেন থিয়াগো সিলভা। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে ১১তম ম্যাচে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন থিয়াগো।
ম্যাচের শুরু থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চড়াও হয় ব্রাজিল। ৭ মিনিটের মাথাতেই এগিয়ে যায় তারা। রাইট ফ্ল্যাংক ধরে রাফিনহার বাড়ানো পাসে গোল করে শুরুতেই দলকে এগিয়ে দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
দ্বিতীয় গোলের দেখা পেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি সেলেসাওদের। ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় রিচার্লিসনকে ডিবক্সে ফাউল করা হলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নেইমার। রোলান্ডো এবং পেলের পরে তৃতীয় ব্রাজিলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপের তিনটি ভিন্ন আসরে গোল করার রেকর্ড গড়লেন নেইমার। ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের শেষ ৬টি গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে।
দুটি গোল খাওয়ার পর কিছুটা হুঁশ ফেরে দক্ষিণ কোরিয়ানদের। এবারে পাল্টা-আক্রমণের চেষ্টা করে দলটি। বল পায়ে পেয়ে ডিবক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিলের গোলবার লক্ষ্য করে শট নেন আগের ম্যাচে গোল করা হুয়াং হি চ্যান। অ্যালিসন বেকার বা দিকে ডাইভ দিয়ে শটটি সেভ করেন।
২৯তম মিনিটে অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার বাড়ানো পাস থেকে ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করেন ব্রাজিলের নাম্বার নাইন রিচার্লিসন।
৩৬ মিনিটের মাথায় ভিনিসিয়াস জুনিয়রের বাড়ানো বল থেকে চতুর্থ গোলটি করেন লুকাস পাকুয়েতা।
দ্বিতীয়ার্ধে ফেরার চেষ্টা করে দক্ষিণ কোরিয়া। ৪৮ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের ডিবক্সে জায়গা পেয়ে শট নেন হিউং মিন সন। কিন্তু বারের পাশ দিয়ে চলে যায় বলটি।
৫৪ মিনিটের মাথায় দক্ষিণ কোরিয়ার ডিবক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডরা। রাফিনহার শট থামিয়ে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার গোলকিপার কিম সিউং গিউ। ৬২ মিনিটের মাথায় নেইমারের ক্রস থেকে রাফিনহা আবারো গোল করার সুযোগ পেলে এবারো তাকে পরাস্ত করেন কিম। ৬৬ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে আক্রমণে যান রাফিনহা। তিনি ব্যাক পাস দিয়েছিলেন রিচার্লিসনকে। কিন্তু তিনি বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে ব্রাজিলের আরো একটি গোলের সুযোগ নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটি সুযোগ মিস না হলে ব্যবধান আরো বড় হতে পারত।
৮০ মিনিটের মাথায় অবশেষে একটি গোল শোধ করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ কোরিয়া। সিউং হো পাইকের গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনে দলটি। শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলে ব্রাজিলের সাম্বা ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ির পথ ধরল এশিয়ার দেশটি। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।