“চাই নারীর অধিকার ও সুরক্ষা” – এই দাবিকে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জামাআতে ইসলামী হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক সংগঠন মহিলা সমাবেশ কলকাতার পার্কসার্কাসে এবং মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ানে আয়োজন করতে চলেছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে সংগঠনটি এই তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি সমাবেশ অনুষ্ঠিত।
জামায়াতের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক বিবৃতিতে বলেন, সমাজের উন্নয়ন নারীদের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া সম্ভবপর নয়। সেইসঙ্গে তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে পিউ রিসার্চ-এর একটি তথ্যের উল্লেখ করে ভারতে কন্যাভ্রূণ হত্যার ভয়াবহতার চিত্রকে তুলে ধরেন। কন্যাভ্রূণ হত্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে সবচেয়ে বেশি হলেও, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও ঘটনা কম নয়। কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রতিকার চাই। সমাজকে সচেতন করতে হবে, যাতে কন্যাভ্রূণ হত্যা দেশে বন্ধ হয়।
গার্হস্থ্য হিংসার কবলে পড়ে নারীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অপরাধীদের দ্রুত সাজা দেবার তিনি দাবি করেন। গার্হস্থ্য হিংসার হাত থেকে গৃহবধূদের বাঁচাতে সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মা-কন্যা-ভগ্নি হিসেবে নারীদের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি সমাজের নৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়কে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
মায়ের পায়ের নীচে স্বর্গ-বেহেশত – সব ধর্মীয় গ্রন্থে মায়ের মর্যাদাকে এভাবে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়েছে। এই দৃষ্টিতে নারীকে সম্মানের নজরে দেখতে হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আব্দুর রফিক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যেন হিজাব মামলায় মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। কর্ণাটক সরকার হিজাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাকে তুলে দেবার আবেদন জানান।
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ বিভাগে নিয়োগে মুসলিম মেয়েদের স্কার্ফ পরে আসার জন্য তাদের পরীক্ষা নিতে দেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে জামাআতে ইসলামী হিন্দের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।
সাংবাদিক সম্মেলনে জামাআতের নারী বিভাগের দক্ষিণবঙ্গের সম্পাদক রেহেনা সুলতানা বক্তব্য রাখেন। নারীদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার বিষয়ে জোরালো সওয়াল তিনি করেন। সব সম্প্রদায়ের নারীর সুরক্ষা ও অধিকারের প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে কলকাতা ও ধূলিয়ানে সুবিশাল মহিলা সমাবেশের আয়োজনের উল্লেখ করেন। সকলের সর্বাত্মক সহায়তা ও যোগদানের আবেদন করেন।
উত্তরবঙ্গের নারী বিভাগের সম্পাদক নাঈমা আনসারী সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন। হাথরস, নির্ভয়া কাণ্ড, কামদুনি, পার্কস্ট্রীট কাণ্ডের উল্লেখ করে বলেন, ধর্ষণের কবল থেকে দেশ মুক্ত হতে পারছে না। বরং ঘটনা বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে নারীদের কল্যাণে এই সরকার নানা প্রকল্প হাতে নিলেও নারীদের সুরক্ষার বিষয়ে কমজোরি দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে নারীদের সুরক্ষার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবার জন্য সংগঠনের তরফে দাবি রাখেন।
সাইবার অপরাধ বন্ধ করতে হবে। বাসে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ দিতে হবে। নারী অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে সব মহকুমায় ফাস্টট্র্যাক আদালত কায়েম করতে হবে। লোকদের নৈতিক চেতনাকে বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সব ধর্মের সাধারণ নৈতিক শিক্ষার বিষয়টিকে কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। সাংবাদিক সম্মেলনের পরিচালনা করেন সহকারী সম্পাদক মঞ্জুরা খাতুন। এতে উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি ডা. মসিহুর রহমান ও সাদাব মাসুম।
মহিলা সম্মেলন: ২২ জানুয়ারি, কলকাতা পার্কসার্কাস ময়দান, বেলা ১১টা
২৩ জানুয়ারি, ধূলিয়ান, মুর্শিদাবাদ, বেলা ১১টা