বিভেদের রাজনীতিই কি তাহলে ব্যুমেরাং হতে চলেছে? বিজেপির অন্দরে এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, শিক্ষিত মুসলিম নাগরিকদের কাছে যান। তাঁদের বোঝান। দেশজুড়ে সেদিন থেকেই একটি প্রশ্ন ঝড় তুলেছে—কোন বিষয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রধানমন্ত্রী? বিজেপির অভ্যন্তরীণ একের পর এক সমীক্ষা এবং রিপোর্ট যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে কিন্তু স্পষ্ট—সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে স্বস্তিতে নেই গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই গত লোকসভা ভোটে প্রাপ্ত বিপুল আসন সংখ্যার মধ্যে ১৬০ থেকে ১৮০টি কেন্দ্র নিয়ে রীতিমতো সংশয় প্রকাশ করে রেখেছে বিজেপি। তার উপর এখন সামনে আসছে দলের সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু মোর্চার মূল্যায়ন। সেখানে সমীক্ষায় ৬০টি আসনকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, এই কেন্দ্রগুলিতে বিজেপির জয়ের আশাই কার্যত নেই। এমনকী, ওই আসনগুলিতে সংখ্যালঘু ভোট আদৌ কতটা মিলবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই তালিকায় উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশের সংগঠন। কারণ, সারা দেশের মধ্যে তুলনায় সবথেকে বেশি ‘দুর্বল’ সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসন চিহ্নিত করা হয়েছে এই দুই রাজ্য থেকেই। বাংলা এবং যোগীরাজ্যের ক্ষেত্রে এমন ১৩টি করে সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসন চিহ্নিত করেছে বিজেপি।
রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, দিনের পর দিন যেভাবে গেরুয়া শিবির হিন্দুত্বের রাজনীতি করে গিয়েছে, তারই মূল্য দিতে হতে পারে আগামী নির্বাচনে। সেই ভয় ধরেছে বিজেপির অন্দরেও। গত সপ্তাহে দিল্লিতে বিজেপির দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের সমাপ্তি ভাষণে মোদি সতর্ক করার পরই বিজেপির সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু মোর্চা একটি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন করেছে। তাতে তাদের স্পষ্ট বার্তা, এই ৬০টি সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসনে ব্যাপক জনসংযোগ গড়ে তুলতে না পারলে সন্তোষজনক ভোটপ্রাপ্তির কোনও সম্ভাবনাই নেই। দলীয় সূত্রের খবর, ওই ৬০টি আসনের প্রতিটিতে অন্তত পাঁচ হাজার সংখ্যালঘু মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে বিজেপি। পাশাপাশি আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাসে দিল্লিতে মেগা সংখ্যালঘু সমাবেশেরও চিন্তাভাবনাও করছে দল।
বিজেপির সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি জামাল সিদ্দিকি ‘বর্তমান’কে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক লাভ, লোকসানের কথা আমরা এখন ভাবছিই না। আমাদের লক্ষ্য একটাই—জনসংযোগ। যাঁদের কাছে আমরা পৌঁছব, তাঁরা যদি বিজেপির সদস্য নাও হন, সমস্যা নেই। তবে তাঁদের বোঝানো হবে, বিজেপিতে তাঁরা সব সময় স্বাগত।’ বিজেপির মূল্যায়নে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (১৩টি), বিহার (চারটি), কেরল (ছ’টি), অসম (ছ’টি), মধ্যপ্রদেশ (তিনটি), তেলেঙ্গানা (দু’টি), হরিয়ানা (দু’টি), মহারাষ্ট্র (একটি), জম্মু-কাশ্মীর (পাঁচটি) এবং লাক্ষাদ্বীপ। এরই পাশাপাশি কেরলের অন্য কয়েকটি সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসনকেও এর মধ্যে জুড়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি চার্লস নন্দী বলেন, ‘আমরা দলের সংখ্যালঘু প্রভাবিত সাংগঠনিক জেলাগুলিকে ধরে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছি। সারা রাজ্যেই এই সংক্রান্ত জনসংযোগ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’ (সৌজন্যে: অনলাইন বর্তমান পত্রিকা)