রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ১০০ কিলোমিটার দূরের এক শহরে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত মঙ্গলবার মস্কোর মাত্র ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বের কোলোমনা শহরে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষার জন্য এ ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের বছর পূর্তি হয়েছে। এক বছর পর মস্কোর ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা রাশিয়ার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ কি না, তা সময় বলবে।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি কোনো নির্দিষ্ট হামলার কথা উল্লেখ না করে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলেন। দক্ষিণ ও পশ্চিম রাশিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকাকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার কয়েক ঘণ্টা পর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে রাশিয়া। এরপর রুশ কর্তৃপক্ষ সেন্ট পিটার্সবার্গের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। বেশ কয়েকটি রাশিয়ান টেলিভিশন স্টেশন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কবার্তাও প্রচার করে। তবে কর্মকর্তারা এ ঘটনার জন্য হ্যাকিংকে দায়ী করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে ড্রোন ভূপাতিতের ঘটনায় মস্কোর অভিযোগ ইউক্রেন দুটি অঞ্চলে রাতারাতি ড্রোন হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার চেষ্টা চালানো হয়। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। মস্কোর এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য অবশ্য ইউক্রেনের পক্ষ থেকে করা হয়নি।
মস্কো অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিওভ এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, মস্কোর কাছে যে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়েছে, সেটি সম্ভবত কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর লক্ষ্যে পাঠানো হয়েছিল। মস্কো থেকে ১০০ কিলোমিটারের মতো দূরে গুবাস্তোভো গ্রামের কাছে একটি কারখানা রয়েছে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের। সেখানেই ড্রোনটি ভূপাতিত হয়েছে। তবে এতে তাদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়নি বলে জানিয়েছে গ্যাজপ্রম।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ক্রাসনোদার ও আদিজেয়া অঞ্চলে বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাতে ড্রোন হামলা করার চেষ্টা করে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ড্রোনপ্রতিরোধী ব্যবস্থা দ্রুত এ আক্রমণ প্রতিহত করে। আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দুটি ড্রোনই লক্ষ্যচ্যুত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মাঠে গিয়ে পড়ে। রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, ক্রিমিয়া থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে ক্রাসনোদার অঞ্চলে একটি তেলের ডিপোতে আগুন লাগে। এর আগে সেখানকার আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা যায়।
স্থানীয় রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের মতে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের সীমান্তে ও দেশের অনেক ভেতরের অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। আন্দ্রেই ভোরোবিওভ বলেন, ড্রোনটি কোনো ক্ষতি করেনি। তিনি ড্রোনটিকে ইউক্রেনীয় হিসেবে উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, এটি সম্ভবত ‘বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলার লক্ষ্যে’ পাঠানো হয়েছিল। ড্রোনটির যে ছবি সামনে এসেছে তাতে এটিকে ইউক্রেনীয় বলে মনে হয়েছে। এটির সীমা ৮০০ কিলোমিটার (প্রায় ৫০০ মাইল) পর্যন্ত হলেও এটি বড় ধরনের বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম নয়।