তৃণমূল আর জাতীয় দল নয়। সোমবারই সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে জাতীয় দলের তকমা হারিয়েছে বাম দল সিপিআই (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া) এবং মহারাষ্ট্রের নেতা শরদ পওয়ারের এনসিপি (ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টি)। তাদেরও জাতীয় দলের তকমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাম মহলে শোক বাড়িয়েছিল সিপিআইয়ের জাতীয় দলের তকমা চলে যাওয়া। সেই শোক আরও বাড়িয়ে দিল নির্বাচন কমিশনের আর এক সিদ্ধান্ত। বাংলায় সিপিএমের দীর্ঘ দিনের শরিক দল আরএসপি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য দলের মর্যাদাও হারাল।
পুরো নাম রেভলিউশনারি সোশালিস্ট পার্টি। তবে আরএসপি নামেই পরিচিতি বেশি। বাম জমানায় বাংলার দাপুটে মন্ত্রী প্রয়াত ক্ষিতি গোস্বামী ছিলেন এই দলেরই বিধায়ক। সেই দল অনেক দিন ধরেই রাজনৈতিক আলচনায় সে ভাবে নেই। ২০১১ সালে বাংলায় পালাবদলের পর বড় শরিক সিপিএমের শক্তি কমতে থাকে। বিধানসভায় এখন বিধায়ক সংখ্যা শূন্য। আর তিন শরিক দল কার্যত অস্তিত্ব সঙ্কটে। উদয়ন গুহ, পরেশ অধিকারীর মতো শরিক দলের অনেক নেতাই তৃণমূল কংগ্রেসে। আরএসপি এ বার রাজ্য দলের তকমাও হারিয়েছে। সোমবার সেই ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
রাজ্য দলের তকমা পেতে হলে পাঁচটি শর্তের একটি পূরণ করতেই হয়। প্রথম শর্ত, শেষ বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে ৬ শতাংশ ভোট এবং দু’টি আসনে জিততে হয়। দ্বিতীয় শর্ত, সর্ব শেষ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রদত্ত ভোটের কমপক্ষে ৬ শতাংশ পেতেই হবে কিংবা দলের প্রতীকে অন্তত এক জন সাংসদকে নির্বাচিত হতে হবে। তৃতীয় শর্ত, রাজ্যের শেষ বিধানসভা নির্বাচনে মোট আসনের তিন শতাংশ অথবা তিনটি আসনে জয়ী হতে হবে। চতুর্থ শর্ত, শেষ লোকসভা নির্বাচনে দলকে প্রতি ২৫টি আসন পিছু কমপক্ষে একজনকে জেতাতে হবে। পঞ্চম শর্ত, শেষ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে মোট প্রদত্ত ভোটের কমপক্ষে আট শতাংশ পেতেই হবে। এই পাঁচটি শর্তের কোনওটাই পূরণ করতে পারেনি আরএসপি।
যে হিসাবে আরএসপির রাজ্য দলের তকমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাতে কমিশন জানিয়েছে ২০১১ সালে রাজ্যের ২৯৪ আসনের মধ্যে সাতটিতে জয় পেয়েছিল। ভোট পেয়েছিল ২.৯৬ শতাংশ। আর ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কোনও আসনেই জিততে পারেনি। ভোট পায় ২.৪৬ শতাংশ। সেই কারণেই আরএসপি আর রাজ্য দল নয় বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর পরে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তিনটি আসনে জয় পায় আরএসপি। আর ভোট পেয়েছিল ১.৬৭ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আরএসপি কোনও আসনে জিততে তো পারেইনি, ভোটও পেয়েছিল ০.৩৭ শতাংশ। আর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য আসনের সঙ্গে আরএসপির ভোট প্রাপ্তি ছিল ০.২১ শতাংশ।
রাজ্য দলের তকমা হারানোয় একটাই সমস্যায় পড়বে আরএসপি। তাদের প্রতীক ‘কোদাল বেলচা’ আর একেবারে নিজস্ব রইল না। অন্য কেউ এই প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে। (সৌজন্যে: আনন্দবাজার অনলাইন)