দেশের মানুষের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ক্ষমা’ চাওয়া উচিত বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে তাঁর ৯ বছরের রাজত্বকাল সম্পর্কে ৯টি গুরুতর প্রশ্নও তুলেছে ওই দল। ‘নয় সাল, নয় সওয়াল’ শীর্ষক ওই পুস্তিকায় মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দেশের সুরক্ষা থেকে সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে ৯টি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। কংগ্রেস মনে করে, মোদী সরকারের ৯ বছর পূর্তির দিনটিকে ‘মাফি দিবস’ হিসাবে পালন করা উচিত।
মোদী সরকারের ন’ বছরের রাজত্বকালকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী শুক্রবার হিন্দি টুইটে বলেছেন, ‘৯ বছর ধরে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ইমারত তৈরি করেছে বিজেপি আর দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে জনগণকে।’ দলের তোলা ৯টি প্রশ্ন সংবলিত সেই টুইটে তিনি আরও বলেছেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি, ঘৃণা আর বেকারত্ব—এই সমস্ত ব্যর্থতার দায় আপনাকে নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী।’ একইভাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে টুইটে মোদীকে বিঁধে বলেছেন, ‘গত ৯ বছরে, দেশের কোটি কোটি যুবক-যুবতীর কাজ ছিনিয়ে নিয়ে বিশ্বগুরু হয়েছে মোদী সরকার।’
এদিন ওই পুস্তিকা প্রকাশ করে সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময় এই ধরনের গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। তার ওপর ভিত্তি করেই ৯টি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আমরা চাই নীরবতা ভেঙে প্রশ্নগুলির জবাব দিন প্রধানমন্ত্রী। রমেশের কটাক্ষ, ‘মোদীর যখন চুপ করে থাকার কথা তখন উনি বলতেই থাকেন, আবার যখন বলার কথা তখন নীরব থাকেন।’
এদিন কংগ্রেসের তরফে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ভারতে বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতি কেন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে? কেন ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন আর গরিব কেন আরও গরিব হয়ে পড়ছেন? দেশের সম্পদ কেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বন্ধুর কাছে জলের দরে বেচে দেওয়া হচ্ছে? দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে কেন? দেশের কৃষি এবং কৃষকের সমস্যার কথা তুলে ধরে জানতে চাওয়া হয়েছে, কৃষকদের সঙ্গে যে চুক্তিকে সম্মান জানানো হলো না কেন? কেন এমএসপি’র আইনি বৈধতা দেওবা হলো না? ৯ বছরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হলো না কেন? প্রশ্ন তোলা হয়েছে দুর্নীতি ও ধান্দার পুঁজিবাদ নিয়েও। প্রশ্ন করা হয়েছে, মানুষের কষ্টার্জিত অর্থের সঞ্চয়ে গড়ে ওঠা জীবন বিমা এবং স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থ বন্ধু আদানির সংস্থায় লগ্নি করা হচ্ছে? চোরেদের দেশ থেকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হলো কেন? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ব্যাপক দুর্নীতি হলেও আপনি নীরব কেন? ভোটে ফায়দা লুটতে ইচ্ছাকৃতভাবে কেন ঘৃণার রাজনীতি ছড়ানো হচ্ছে? একইভাবে সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে কেন জানতে চাওয়া হয়েছে। দেশে দলিত, তফসিলি জাতি, আদিবাসী, ওবিসি, মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিয়েও নীরব কেন? জাতিগত জনগণনা এড়িয়ে যাচ্ছে কেন মোদী সরকার, সেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
৯ বছর ধরে সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কেন, জানতে চেয়েছে কংগ্রেস। বিরোধী দল কিংবা নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন কেন? বিপুল অর্থ খরচ করে বিরোধী দলের সরকারকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন কংগ্রেসের। সামাজিক প্রকল্পের বাজেট ক্রমাগত কাটছাঁট করা কিংবা চীন নিয়ে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ১৮টি বৈঠক হওয়ার পরেও মিটলো না কেন, জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিশেষে কোভিডে দেশের ৪০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হলেও তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র উপেক্ষা করলো কেন বলে জনতে চাওয়া হয়েছে মোদীর কাছে।
প্রশ্নগুলি তুলে রমেশ স্পষ্টই বলেছেন, দেশের মানুষ মোদী সরকারের ওপর বীতশ্রদ্ধ। কর্নাটক ভোটের প্রভাব দেশের আগামী নির্বাচনের ওপর পড়বে বলেই জোর দিয়ে বলেছেন রমেশ।
এদিকে কংগ্রেস যেদিন মোদী সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব সেদিনই নিজেদের ৯ বছরের মাহাত্ম্য প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়লো বিজেপি। ওই দলের দাবি, মোদীর নেতৃত্বে ‘সার্বিক উন্নয়ন এবং সর্বব্যাপী বিকাশ ঘটেছে’। আগে নাকি উন্নয়নের প্রসাদ পেতেন কিছু মানুষ এখন মোদীর আমলে বিকাশের সুফল থেকে বঞ্চিত হন না কেউই, দাবি করেছে বিজেপি। (সৌজন্যে: গণশক্তি অনলাইন)