এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে বিজেপির একটাই মুখ। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে তাঁর মুখকে সামনে রেখেই লোকসভা নির্বাচনে লড়েছে। এখনও পর্যন্ত বিজেপির যা পরিকল্পনা তাতে আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনেও মোদীর মুখকে সামনে রেখেই লড়াইয়ে নামবে দল। এমনই সময়ে আরএসএস-এর ইংরেজি মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ সতর্ক করল বিজেপিকে। ওই সাপ্তাহিকের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মোদীর ক্যারিশমা এবং হিন্দুত্ব রাজনীতি নির্বাচনে জয়ের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আঞ্চলিক স্তরে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা প্রয়োজন।
গত ন’বছরে যে কোনও রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনেও মোদীকেই মুখ করেই লড়েছে বিজেপি। অনেক রাজ্যে সাফল্য মিললেও সদ্যই ধাক্কা খেয়েছে কর্নাটকে। হিমাচল প্রদেশেও বিজেপি পর্যুদস্ত হলেও কর্নাটক নির্বাচনে কংগ্রেসের উত্থান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের কাছে। সেই চিন্তাই স্পষ্ট হয়েছে দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘অর্গানাইজার’-এর সম্পাদকীয়তে। স্বয়ং সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকার ২৩ মে প্রকাশিত সংখ্যার সম্পাদকীয় কলমে লিখেছেন, ‘‘বিজেপির বোধোদয়ের জন্য এটাই সঠিক সময়। আঞ্চলিক স্তরে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং তাঁদের কার্যকরী ভূমিকা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি এবং হিন্দুত্বের আদর্শবাদ যথেষ্ট নয়।’’ একই সঙ্গে তিনি মোদীর নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘আদর্শ এবং নেতৃত্ব তখনই সত্যিকারের সম্পদ যখন রাজ্য সরকারগুলি সঠিক ভাবে কাজ করবে।’’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে কর্নাটক নির্বাচনের ফলঘোষণার পরে দেখা যায়, ৬০ শতাংশের বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। দখল হারিয়েছে বিজেপি। অথচ কর্নাটক দখলে রাখতে চেষ্টার কসুর করেনি গেরুয়া শিবির। পশ্চিমবঙ্গ দখল করার চেষ্টার মতোই ছিল কর্নাটক ধরে রাখার লড়াই। প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। কিন্তু মোদীর ফুলে ঢাকা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার থেকে ডেলিভারি বয়ের স্কুটারে চেপে রাহুল গান্ধীর যাত্রাতেই আস্থা রাখেন কর্নাটকের মানুষ। ২২৪ আসনের কর্নাটকে কংগ্রেস পায় ১৩৫ আসন, তাদের জোটসঙ্গী পায় ১টি। অন্য দিকে, বিজেপি আগের ১০৪ থেকে নেমে যায় ৬৬ আসনে। ভোট প্রাপ্তি ৩৬ শতাংশ। এমন ফলের পরে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস অনেকটাই অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ‘অর্গানাইজার’-এর সম্পাদকীয়তে।
প্রসঙ্গত, কর্নাটকে বিজেপির ফল খারাপ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে যে যে বিষয় উঠে এসেছিল তাতে স্থানীয় স্তরে নেতাদের মধ্যে তালমিলের অভাবের কথা বলা হয়েছিল। কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়া বা শিবকুমারের মতো নেতা ছিল না বিজেপির। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হওয়ার মতো দাপুটে নেতার অভাব ছিল বিজেপির। দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বাসবরাজ বোম্মাইয়ের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে ইয়েদুরাপ্পাকে ছাড়া আর যাঁরা বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হতে পারতেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম জগদীশ শেট্টার এবং লক্ষ্মণ সাভাডিকে টিকিট দেওয়া হয়নি। ঘটনাচক্রে, এই ইয়েদুরাপ্পা, জগদীশ এবং লক্ষ্মণ— এই তিন নেতাই লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ভুক্ত। প্রশ্ন উঠেছিল, বিজেপির আদি ভোটব্যাঙ্ক লিঙ্গায়েতদের পদ্ম-বিমুখতা কি তারই ফল? এই প্রসঙ্গও সম্পাদকীয়তে টেনেছেন প্রফুল্ল। তিনি লিখেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম বার কোনও বিধানসভা নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।’’ একই সঙ্গে বলা হয়েছে, পুরনো ভোট হারায় বিজেপি। ক্ষমতাসীন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া নিয়েও বিজেপির কাছে সতর্ক হওয়ার মতো বিষয়।
আরএসএস-এর মুখপত্র যে বিজেপি নেতৃত্বকে সতর্ক করার জন্যই এমন মন্তব্য করেছে তা শিরোনামেই স্পষ্ট। প্রফুল্ল সম্পাদকীয়র শিরোনাম দিয়েছেন— ‘কর্নাটক রেজাল্টস: অপরচুন টাইম ফর ইনট্রোস্পেকশন’ (কর্নাটকের ফলাফল: আত্মবিশ্লেষণের উপযুক্ত সময়)।( সৌজন্যে: আনন্দবাজার অনলাইন)