যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের শত শত সরকারি স্পর্শকাতর নথিপত্র যথাযথভাবে না রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব নথির মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচির গোপন নথি এবং সামরিক পরিকল্পনার কাগজপত্রও রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে যে ৩৭ দফা অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, তিনি ফ্লোরিডার বাসভবনে সরকারি গোপন কাগজপত্র রেখেছিলেন। এসব কাগজপত্রের কিছু রাখা হয়েছিল বলরুমে এবং বাথরুমে। তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলা এবং তদন্তে বিঘ্ন তৈরির অভিযোগও আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে ফেডারেল মামলা হলো। ৪৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব স্পর্শকাতর নথিপত্র তার বাসায় রেখেছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে:
১. যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কাগজপত্র।
২. যুক্তরাষ্ট্র এবং বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষা এবং সামরিক অস্ত্রপাতির বিবরণ।
৩. যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র দেশগুলোর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেসব ঘাটতি রয়েছে।
৪. অন্য কোনো দেশের হামলার শিকার হলে কিভাবে পাল্টা জবাব দেয়া হবে, সেসব পরিকল্পনার বিস্তারিত।
তদন্তকারীরা বলছেন, যখন ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যান, তখন তিনি প্রায় ৩০০ স্পর্শকাতর নথিপত্র ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-এ-লাগোয় তার বাড়িতে নিয়ে যান। সেটি দামী সদস্যপদের একটি ক্লাবও।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এরপর থেকে মার-এ-লাগোতে হাজার হাজার সদস্য এবং অতিথিদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। এমনকি যে বলরুম থেকে নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানেও বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠান করা হয়েছে। কিছু নথিপত্র বাথরুমে, গোছল করার স্থানে এবং ট্রাম্পের অফিস ও শয়ন কক্ষেও রাখা হয়েছিল।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, মার-এ-লাগো এমন কোনো অনুমোদিত স্থান নয়, যেখানে স্পর্শকাতর কাগজপত্র রাখা যেতে পারে।
কৌসুলিরা বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া নথিপত্রের বিষয়ে যখন এফবিআই তদন্ত শুরু করেছিল, সেগুলো তার আইনজীবী ‘লুকিয়ে রেখেছে বা ধ্বংস করে ফেলেছে’, এমন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অভিযোগপত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, একজন আইনজীবীকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘’আমাদের এখানে এরকম কিছু নেই, সেটা বললেই কি ভালো হয় না?’’
এই মামলায় প্রথম ফ্লোরিডার মায়ামির আদালতে হাজিরা দিতে বে আগামী মঙ্গলবার, যেদিন তার ৭৭তম জন্মদিন।
নিউ জার্সির বেডমিনস্টার গলফ ক্লাসে ২০২১ সালে একটি পার্টিতে অতিথিদের কাছে কিছু কাগজপত্র তুলে ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সেগুলো হামলার পরিকল্পনার কাগজপত্র। তার নির্দেশে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেগুলো তৈরি করেছে।
‘’একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমি এগুলো প্রকাশযোগ্য ঘোষণা করতে পারতাম, কিন্তু এখন আর সেটা পারবো না। কিন্তু এগুলো এখনো গোপনীয়,’’ অডিও রেকর্ডিং বরাত দিয়ে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার কিছু কাগজপত্র এমন একজন ব্যক্তিকে দেখান, যারা নিরাপত্তার ব্যাপারে ছাড়পত্র ছিল না।
এই তদন্তের তদারকি কর্মকর্তা বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ বলেছেন, দেশের আইন অনুযায়ী জাতীয় প্রতিরক্ষা তথ্যর অবশ্যই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এই আইন মেনে চলতে হবে।
‘’আমাদের দেশে বেশ কিছু আইন রয়েছে এবং সেগুলো সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য,’’তিনি বলেছেন।
এরপর নিজের ট্রুথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বার্তায় জ্যাক স্মিথকে ‘বদ্ধ পাগল’ বলে বর্ণনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘’তিনি ট্রাম্প বিদ্বেষী একজন মানুষ- একজন বদ্ধ উন্মাদ যার বিচার সম্পর্কিত কোন ধরনের কর্মকাণ্ডেই জড়িত হওয়া উচিত না,’’ তিনি লিখেছেন ট্রুথ সামাজিক মাধ্যমে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দফতর আর ডেলাওয়ারের বাড়িতেও স্পর্শকাতর কাগজপত্র পাওয়া গেছে।
হোয়াইট হাউজ এর আগে জানিয়েছে যে, এসব নথিপত্র দেখতে পাওয়ার সাথে সাথে কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে এবং সকল রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় একজন কৌসুলি এটি তদন্ত করছে।
অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তে বিঘ্ন তৈরির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এসব অভিযোগ প্রকাশ করার পর ট্রাম্পের দুইজন আইনজীবী পদত্যাগ করেন। তারা কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করলেও শুধু বলেছেন, পদত্যাগের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়।
এটা হচ্ছে দ্বিতীয় ফৌজদারি মামলা যেজন্য ট্রাম্পকে আদালতে যেতে হচ্ছে।। নিউইয়র্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় সামনের বছর তাকে হাজিরা দিতে হবে, যেখানে একজন পর্ন তারকাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তিনি টাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র : বিবিসি