পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে চলতে থাকা অশান্তি নিয়ে আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল রাজ্য এবং নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে যদি কমিশন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তবে আদালত গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে দেবে।’’ মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির কথা উল্লেখ করে আদালত এ কথাও জানিয়েছে যে, ‘‘পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে রায় কার্যকর করার ব্যবস্থা না হলে আদালত নিশ্চুপ দর্শকের মতো বসে থাকবে না।’’
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের জনস্বার্থ মামলায় হাই কোর্ট যে রায় ঘোষণা করেছিল, তা পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে গিয়েছিলেন রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে রাজ্য ছাড়াও কমিশন এবং বিরোধী দল বিজেপি এ নিয়ে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়।
প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাতটি স্পর্শকাতর জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু স্পর্শকাতর এলাকা এখনও চিহ্নিত হয়নি। তাই এই রায় পুনর্বিবেচনা করা হোক।’’ এর পর প্রধান বিচারপতি, কমিশনের আইনজীবী, কল্যাণ এবং বিজেপির আইনজীবীর মধ্যে নিম্নলিখিত কথোপকথন হয়:
প্রধান বিচারপতি: রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী কোথায়? কমিশনের পরিবর্তে রাজ্য এটা নিয়ে কী ভাবে আর্জি করতে পারে?
কমিশনের আইনজীবী: আমরা এখনও স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করিনি। রায়ের এই অংশটি নিয়ে আমরাও বলতাম। কারণ, এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রধান বিচারপতি: ঠিক আছে। আমরা তা হলে রায়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী সারা রাজ্যের জন্য বলে দিচ্ছি।
কমিশনের আইনজীবী: স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে আমরা অবস্থান জানাব। কিছুটা সময় লাগবে।
প্রধান বিচারপতি: নিজেদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখবেন। মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির খবর আসছে।
কল্যাণ: ইতিমধ্যে আট রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রায় বিবেচনা করে দেখা উচিত।
বিজেপির আইনজীবী: আমরা রায়ের ব্যাখ্যা চাইছি। আদালত অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রধান বিচারপতি: রায় মেনে না নিলে চ্যালেঞ্জ করুন। না হলে প্রয়োজনে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে পারে আদালত। এই ভাবে শুধু সময় নষ্ট হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি: আমি কমিশনকে উপদেশ দেওয়ার জন্য বসে নেই যে, আপনারা উচ্চ আদালতে যান। আপনাদের হাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আপনারা যদি আমাদের নির্দেশকে কার্যকর না করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেন, তা হলে আমরা নিশ্চুপ দর্শক হয়ে বসে থাকব না। বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পুলিশ পদক্ষেপ করুক। (আনন্দবাজার অনলাইন)