সুরা ইব্রাহিম পবিত্র কোরআনের ১৪তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ৭ রুকু, ৫২ আয়াত। এই সুরায় কুরাইশদের বিশেষভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, কারণ তারাই ছিল ক্ষমতাবান। এতে ইব্রাহিম (আ.) এবং অন্য নবী-রাসুলদের আবির্ভাব, তাঁদের স্বজাতির বিরোধিতা এবং সত্যের জন্য তাঁদের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। মুসা (আ.)-এর উপদেশও এতে রয়েছে। পবিত্র কোরআনের দাওয়াত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাওয়াতের স্মারক।
এ সুরার সারকথা
এতে বলা হয়েছে কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য। প্রত্যেক রাসুলকে নিজ জাতির ভাষায় দাওয়াত দিতে পাঠানো হয়েছে। হজরত মুসা (আ.)–কেও একই উদ্দেশ্যে আল্লাহর বাণী দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। আগের রাসুলদের দাওয়াত আর তাঁদের স্বজাতির কুফরির মধ্যে দ্বন্দ্ব। অবিশ্বাসীদের কর্মকাণ্ড।
পরকালে দুর্বল ও শক্তিমানদের বিতর্ক। বিচারের পর হাশরের ময়দানে শয়তানের বক্তৃতা। বিশ্বাসীদের শুভ পরিণতি। সত্য ও মিথ্যার উপমা। মানুষের প্রতি আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ।
মূর্তিপূজারিদের বিরুদ্ধে ইব্রাহিম (আ.)–এর প্রার্থনা। ইব্রাহিমের সন্তানদের একটি অংশকে মক্কায় প্রতিষ্ঠার কারণ।
মানুষকে কিয়ামতের ব্যাপারে সতর্ক করার নির্দেশ। ইসলামের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হবে, তার কথা। কিয়ামতের দিন পৃথিবীকে নতুন রূপে গড়া হবে, অপরাধীরা থাকবে শৃঙ্খলবদ্ধ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
মৌলিক আকিদা, অর্থাৎ তাওহিদ, রিসালাত, পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের ওপর ইমান আনা সম্পর্কে এি সুরায় আলোচনা করা হয়েছে। অবিশ্বাসীদের নিন্দা করা হয়েছে। জাহান্নামের তাদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। বিশ্বাসীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে জান্নাতের। রাসুল (সা.)–কে বলা হয়েছে আগের নবীদের শিক্ষা। বলা হয়েছে যে তাঁর সম্প্রদায় তাঁর সঙ্গে যেমন আচরণ করছে, আগের নবীদের অভিজ্ঞতাও ছিল একই রকম। তারাও তাদের নবীদের অস্বীকার করেছে। আগের নবীদের দাওয়াতের ব্যাপারে তারা চার রকমের সন্দেহ পোষণ করেছিল। তারা আল্লাহ্র অস্তিত্বে সন্দিহান ছিল। সন্দেহের উত্তরে নবীরা বলেছেন, আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বের প্রমাণ এতই সুস্পষ্ট যে এর কোনো প্রমাণ দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বজগতের প্রতিটি অণু, এর সুশৃঙ্খল গতিময়তাই তাঁর একত্বের প্রমাণ। অবিশ্বাসীদের ধারণা ছিল, মানুষ কখনো নবী হতে পারে না। নবীদের উত্তর ছিল, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই মানুষ। মানুষের ওপর আল্লাহ্র বাণী অবতীর্ণ হলে তবেই তিনি নবী বলা হয়ে ওঠেন। আল্লাহর হেকমতের দাবি ছিল, মানুষের কাছে মানুষকেই নবী বানিয়ে পাঠানো হবে। ফেরেশতারা পৃথিবীর বসবাসকারী হলে ফেরেশতাদেরই নবী করে পাঠানো হতো। অবিশ্বাসীদের ইমান থেকে বঞ্চিত হওয়ার বড় কারণ হলো, তার বাপদাদাদের প্রথা অন্ধের মতো অনুসরণ করছে। কোরআনের নানা স্থানে তাদের অসার দাবি খণ্ডন করা হয়েছে।
আল্লাহর নীতি ও শপথ হচ্ছে, তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেন, আর অকৃতজ্ঞদের দেন কঠোর শাস্তি। কৃতজ্ঞতার অর্থ হচ্ছে, অনুগ্রহের কথা স্বীকার করা, তাঁর প্রশংসা করা, তিনি যে উদ্দেশ্যে নিয়ামত দিয়েছেন, তার সদ্ব্যবহার করা।
ইব্রাহিম (আ.) কাবা নির্মাণের পর তাঁর উত্তরাধীকারীদের জন্য যে দোয়া করেছিলেন, এ সুরায় তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ দোয়ায় তিনি তাদের জন্য নিরাপত্তা, উত্তম রিজিক, নামাজ প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমাপ্রাপ্তির দোয়া করেছিলেন। সত্য ও বিশ্বাসকে উত্তম বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার মূল অত্যন্ত দৃঢ়, ফল সুমিষ্ট। পক্ষান্তরে অবিশ্বাসকে উৎপাটিত গাছের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার স্থায়িত্ব নেই এবং নিষ্ফলা।
সুরা ইব্রাহিমের শেষ রুকুতে আছে কিয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তির চিত্র।
কোরআন অবতীর্ণহওয়ার রহস্য বর্ণনা করে সুরাটি শুরু হয়, শেষ আয়াতে বলা হয় কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে। আল্লাহ বলেন, কোরআন মানুষের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বার্তা, যাতে তারা তাঁকে ভয় করে, তারা একক উপাস্য সম্পর্কে জানতে পারে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ নিতে পারে। (সৌজন্যে: প্রথম আলো)