পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তা দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে রাজ্যে। কিন্তু তারা কোথায় থাকবে, কোথায় তাদের দু’বেলার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হবে— সে সব পরিকল্পনার কথা জানায়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এমনকি, কোন বুথে কত বাহিনী রাখা হবে, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। কলকাতা হাই কোর্টে এই অভিযোগ করেছিলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। অভিযোগ শুনে কিছুটা বিরক্তির সুরেই কমিশনকে প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘আপনারা কিছু তো করুন। সময় নষ্ট করবেন না। আমরা তো আর সব কিছুতে নজরদারি করতে পারব না। কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় যাবে, কী ভাবে যাবে, কোথায় খাবেন, কোথায় থাকবেন এগুলো তো কমিশনকেই ব্যবস্থা করতে হবে। ’’
বুধবার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে আদালত অবমাননা মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টে। মামলাটি করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ আবু হাসেম খানচৌধুরী। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। সেখানেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ব্যবস্থাপনার অভাবের কথা আদালতকে জানান কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) অশোককুমার চক্রবর্তী। তা নিয়েই প্রধান বিচারপতি, কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্ত এবং এএসজির কথোপকথন চলে কিছু ক্ষণ।
কেন্দ্রের এএসজি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে কমিশনের কাছে পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা জানায়নি। শুধু জেলাভিত্তিক কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে, তা জানিয়েছে কমিশন। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে, কোন বুথে কত বাহিনী ব্যবহার করা হবে, তারা কোথায় গিয়ে থাকবে এ নিয়ে কমিশন কোনও পরিকল্পনা জানায়নি।
প্রধান বিচারপতি: কমিশনের কী বক্তব্য? তাদেরই তো দায়িত্ব এটা ঠিক করার। আমরা সব কিছুতে নজরদারি করতে পারব না। কমিশনকে তো কিছু পদক্ষেপ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। অথচ কমিশন কী করছে, তা দেখতেই পাচ্ছি না। কিছু তো করুন। সময় নষ্ট করবেন না।
সামান্য থেমে প্রধান বিচারপতি আবার বলেন: কেন্দ্রীয় বাহিনী কারা কোথায় যাবে, কী ভাবে যাবে, কোথায় খাবেন, কোথায় থাকবেন এগুলো তো ব্যবস্থা করতে হবে। এ নিয়ে কমিশনের পরিকল্পনা আগেই জানানো উচিত ছিল। সেনার নোডাল অফিসারের সঙ্গে একটি বৈঠক করলেই তো মিটে যায়। জেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি নিয়ে বলা উচিত।
কমিশনের আইনজীবী: বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে বলা আছে।
প্রধান বিচারপতি: শুধু বলছেন সব কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু কী করেছেন, তা বলছেন না। পর পর কী কী করেছেন তা বলছেন না কেন? আপনারা যাই করুন, কমিশনের উপর যেন সাধারণ মানুষের আস্থা থাকে তা মাথায় রাখবেন। সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোটের পক্ষে কমিশনের ভূমিকা যেন ভোটারদের আস্থা অর্জন করে।
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান বিচারপতি: আপনারা কমিশনকে ২০০ শতাংশ সাহায্য করবেন। না হলে সমস্যা তৈরি হবে।
আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারপতির কথোপকথন এখানেই থামে। এক আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ঝাড়ুদারকে চতুর্থ পোলিং অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছে। তা শুনে আদালত কমিশনকে বলে, যা যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তা নিয়ে আবার রিপোর্ট দিতে হবে কমিশনকে। আরও স্পষ্ট করে বিচারপতি জানিয়ে দেন, আগামী সোমবার দুপুর আড়াইটায় এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন কমিশন এবং রাজ্যকে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে এই মর্মে রিপোর্ট দিতে হবে। (সৌজন্যে: আনন্দবাজার অনলাইন)