‘আপনার বেতন বন্ধ করে দিচ্ছি’! বিচারপতির নির্দেশ শুনে বিপন্ন পর্ষদ সভাপতি বললেন, ‘দয়া করুন’

 

 

 

আদালতের নির্দেশ পালন করা হয়নি— তাই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালের বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যা শুনে ভরা আদালতেই ভেঙে পড়লেন গৌতম।সোমবার বিচারপতির তলব পেয়ে তড়িঘড়ি কলকাতা হাই কোর্টে এসে হাজির হয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, ‘‘আমি আপনার বেতন বন্ধ করে দিচ্ছি। সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও দেবেন।’’ শুনে গৌতম দৃশ্যতই ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘দয়া করে এটা করবেন না।’’

টেট পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশ পর্ষদ পালন করেনি বলে অভিযোগ এসেছিল বিচারপতির কাছে। সোমবার সেই সংক্রান্ত মামলা শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতির বেঞ্চে। শুনানি চলাকালীনই পর্ষদ সভাপতিকে তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দুপুর ৩টের মধ্যে এসে দেখা করতে বলেন তাঁর এজলাসে। তলব পেয়ে তড়িঘড়ি হাই কোর্টে হাজির হন পর্ষদ সভাপতি গৌতমও। তার পরেই দু’জনের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ কথোপকথন হয়—

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: ডিভিশন বেঞ্চে মামলার নম্বর কোথায়?

(২০২০ সালে টেট পরীক্ষা দেওয়া এক চাকরিপ্রার্থীকে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য ডাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু পর্ষদ সেই নির্দেশ মানেনি বলে জানিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। জবাবে পর্ষদের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, পর্ষদ একক বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে। বিষয়টি বিচারাধীন বলেই এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এর পরই ডিভিশন বেঞ্চে মামলার নম্বর জানতে চান বিচারপতি। যা পর্ষদের আইনজীবী জানাতে পারেননি।)

গৌতম পাল: (সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি)

বিচারপতি: আমি আপনার বেতন বন্ধ করে দিচ্ছি। ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেবেন।

গৌতম পাল: ধর্মাবতার, দয়া করে এক সপ্তাহ সময় দিন। আপনার নির্দেশ আমি কার্যকর করব। দয়া করে সময় দিন ধর্মাবতার। পর্ষদ আমাকে বেতন দেয় না। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি বেতন পাই।

বিচারপতি: তা হলে আমি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে বলে দিচ্ছি।

গৌতম পাল: আমার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দয়া করে এটা করবেন না। বাড়িতে আমার অসুস্থ মা রয়েছে। আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করি।

বিচারপতি: ঠিক আছে। শান্ত হোন। ৫ মিনিট সময় দিচ্ছি, বাইরে যান। আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ নিন। তার পর আমাকে জানান।

গৌতম পাল (৫ মিনিট পরে এসে): ধর্মাবতার, আমি আপনার নির্দেশ কার্যকর করব। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দেব ওই প্রার্থীকে। ডিভিশন বেঞ্চেও যাব না।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: আপনাকে আরও ২ সপ্তাহ সময় দেওয়া হল। (এর পর হাত জোড় করে) আপনারা অধ্যাপক মানুষ। আপনাদের সব সময় শ্রদ্ধা করি। কিছু রাজনৈতিক নেতা আদালতের নামে উল্টোপাল্টা বলেন, তাঁদের শ্রদ্ধা করি না। (সৌজন্যে: আনন্দবাজার অনলাইন)

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও