পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই গড়তে হবে বোর্ড। ডাকতে হবে জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে সভা। ১৬ আগস্টের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে এই প্রক্রিয়া।
এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। জেলা শাসক এবং জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন আধিকারিকদের উদ্দেশ্য করে পাঠানো সার্কুলার ঘিরে তৈরি হয়েছে সংশয়। তার কারণ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ।
রাজ্যের যুগ্ম সচিবের সই করা সার্কুলার (৪৪৮১(২২)/পিএন/ও/আই/১ই-০৩/ ২০২৩) জারি হয়েছে ২৭ জুলাই, বৃহস্পতিবার। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অংশ জানাচ্ছে, নির্দেশিকা নিয়মমাফিক। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল যে পঞ্চায়েতে ভোট এবং গণনায় লুট সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ওপর ফল নির্ভর করবে। সেই পরিস্থিতিতে এই নির্দেশিকা এখনই জারি হওয়ায় সংশয় দেখা দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিধানসভায় জানিয়েছিলেন যে ১৬ আগস্টের মধ্যে তিন স্তর, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন করা হবে। ওই দিনই জারি নির্দেশিকায় সেই মর্মেই উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে জেলা শাসক এবং জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের।
গত ১২ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা এবং গণনায় জালিয়াতি সংক্রান্ত একাধিক পিটিশনের শুনানি হয়। আদালত হিংসার জন্য রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে। রাজ্য, কমিশনের পাশাপাশি কেন্দ্রকেও হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে আদালত জানায় যে ফলাফলের ঘোষণা নির্ভর করবে এই মামলার ফলাফলের ওপর।
হাইকোর্টের সূত্র জানাচ্ছে, শুক্রবার সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আইনজীবী মহলের অভিমত, এই নির্দেশিকা ঘিরে সংশয় বিভিন্ন স্তরেই দেখা দিতে পারে। আদালতে মামলা বিচারাধীন। ফলে ফল ঘোষণা এবং বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তার মধ্যেই রাজ্য জারি করে দিয়েছে এই নির্দেশিকা।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলছেন, ‘‘এই নির্দেশিকার পর নিয়ম অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার কথা। সেখানে জয়ী প্রার্থীদের নাম জানিয়ে প্রথম সভা ডাকার কথা। পঞ্চায়েত স্তরে বিডিও, সমিতি স্তরে এসডিও এবং জেলা পরিষদ স্তরে জেলা শাসকদের উদ্যোগেই হয় এই প্রক্রিয়া। তার ভিত্তিতে বোর্ড গঠন হয়। কিন্তু আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি এই নির্দেশিকা কতটা কার্যকর করা সম্ভব সেই প্রশ্ন থাকছে।’’
পাত্র যদিও স্পষ্ট করেই বলেছেন যে আদালত এবং সরকারি প্রক্রিয়া ঘিরে অনিশ্চয়তা থাকলেও সিপিআই(এম) ‘জনগণের পঞ্চায়েত’ গড়ার পক্ষে লড়াই জারি রাখবে।
খেত মজুর আন্দোলনের এই নেতা বলেছেন, ‘‘আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই জনগণের প্রতিটি পয়সার হিসেব দিয়ে চলার জন্য আন্দোলন চলবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রতিটি পর্যায়ে। ‘জনগণের পঞ্চায়েত’ যাতে চলে তার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সরকারি নির্দেশিকা বা আদালতের রায় নিয়ে জটিলতার সঙ্গে আমাদের এই সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই। জটিলতা থাকুক বা কাটুক, আন্দোলন জারি থাকবে।’’ গণশক্তি