ট্রেনে বেছে বেছে গুলি-হত্যা, মুখে ভয়ঙ্কর মুসলিম বিদ্বেষ

 

জয়পুর মুম্বই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের গুলি চালনার ঘটনায় সামনে আসতে শুরু করেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং ভিডিও। এবং সেগুলি থেকে স্পষ্ট, গোটা ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছে চরম মুসলিম বিদ্বেষী মানসিকতা।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, মুসলমান যাত্রীকে খুনের পরে মোদী এবং যোগীর স্তুতি করছেন অভিযুক্ত আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিং।

রাজস্থানের জয়পুর থেকে মুম্বই সেন্ট্রাল স্টেশনে যাচ্ছিল ট্রেনটি। তারমধ্যেই সোমবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটেছে। নিজের উর্ধ্বতন অফিসার টিকারাম মীনাকে প্রথমে গুলি করে খুন করে চেতন সিং। তারপর প্যান্ট্রিকার এবং অপর একটি কামরায় গিয়ে গুলি চালায় চেতন।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভারতীয় রেল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চেতন সিং প্রথমে এএসআই পদমর্যাদার আরপিএফ অফিসার টিকারাম মীনাকে বি-৫ কামরায় খুন করে। বি-৫ কামরাতেই আবদুল কাদির নামে বিহারের মধুবনীর এক বাসিন্দাকে খুন করে চেতন সিং। তারপর ৪টি কামরা টপকে প্যান্ট্রিকারে যায় সে। সেখানে গিয়ে মহম্মদ হুসেন নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে চেতন। তারপর এস-৬ কামরায় গিয়ে আসগার কাই নামে অপর এক ব্যক্তিকে গুলি চালিয়ে খুন করে আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিং।
ভারতীয় রেলের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, নিজের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে মোট ১২ রাউন্ড গুলি চালায় চেতন। টিকারাম মীনার সার্ভিস পিস্তল থেকে ১০ রাউন্ড গুলি চলেছে। সেগুলি আত্মরক্ষায়, নাকি চেতন সিং সেটিকে ব্যবহার করেছে, সেটা স্পষ্ট নয়।
এই ঘটনার সময়ের একাধিক ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। ২টি ভিডিও টুইট করেছেন অল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবের। সেই ভিডিও’র সত্যতা যদিও গণশক্তি ডিজিটাল যাচাই করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা সেই ভিডিওতে চেতন সিংকে এক ব্যক্তির মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পাকিস্তান থেকে তোমাদের মিডিয়া পরিচালিত হচ্ছে। সেই যোগসাজোশের ফলেই ওদের বলে দেওয়া খবর এখানে দেখানো হচ্ছে। এর মাধ্যমেই পাকিস্তানে সব তথ্য এবং খবর চলে যাচ্ছে। যদি মুসলমান হও, যদি হিন্দুস্থানে থাকতে চাও, তাহলে মোদী আর যোগীকে মেনে চলতে হবে।’’

এই কান্ড ঘটানোর পরে মহারাষ্ট্রের বোরিভালিতে চেইন টেনে ট্রেন থামিয়ে পালিয়ে যায় চেতন সিং। কিন্তু পরে স্থানীয় ভয়ান্ডার থানায় আত্মসমর্পন করে চেতন সিং। তাকে হেফাজতে নিয়েছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।

অপরদিকে ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে’র এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রেনের মধ্যে তর্কাতর্কিতে জড়ায় চেতন সিং। সেই তর্ক ধর্মীয় বিবাদে পরিণত হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই এই ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আরপিএফের তরফে দাবি করা হয়েছে, চেতন সিং মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলেন না। সোমবার বিকেল ৫টার কিছু পরে এই ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন তখন ছিল মুম্বই থেকে ২ ঘন্টার দূরত্বে থাকা বৈতারনা স্টেশনে।
আরপিএফ সূত্রে খবর, চেতন সিংয়ের বাড়ি উত্তর প্রদেশের হাথরাসে। সে ১২ বছর ধরে আরপিএফে কর্মরত ছিল। চেতন সিং, নরেন্দ্র পারমার এবং অময় নামে ৩ কনস্টেবল জয়পুর মুম্বই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে ট্রেনে যাত্রী সুরক্ষার জন্য মোতায়েন ছিলেন। ঘটনার সময় কনস্টেবল নরেন্দ্র পারমার এবং কনস্টেবল অময় অন্যত্র ছিলেন।

এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে আসগার কাই চুড়ি বিক্রেতা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

এই ঘটনা সামনে আসতেই বিজেপি সরকারের রাজনীতিকে আক্রমণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের অভিমত, রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সমাজে বিদ্বেষের চাষ করেছে বিজেপি আরএসএস। দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করা মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। উগ্র জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ধর্মান্ধতাকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা বাহিনীর একটা অংশের মধ্যেও। সেই উগ্রতার ভার সামলাতে পারেননি মানসিক ভাবে বিধস্ত অবস্থায় থাকা চেতন সিং। তার ফলেই ঘটে থাকতে পারে এমন মারাত্মক ঘটনা, অভিমত বিভিন্ন অংশের। ( সৌজন্যে: গণশক্তি)

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও