চলতি বছরের শেষের দিকে ৫রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন বিজেপির কাছে অ্যাসিড টেস্ট। এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে বিজেপি। তাই বুধবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে দিল্লিতে, দলের সদর দপ্তরে।
বিজেপি সূত্রে খবর, এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার মত শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন।
বিজেপির সাংগঠিনিক কাঠামো অনুযায়ী, এই কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির মাধ্যমেই দলীয় প্রার্থী তালিকা ঠিক হয়। নির্বাচনী রণকৌশলও এই কমিটির বৈঠকে ঠিক করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার কিছু আগে পরে এই কমিটি বৈঠকে বসে। নির্বাচনের ৩-৪ মাস আগে বৈঠকে বসার নজির কার্যত নেই।
আর সেই নজির নেই বলেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে দিল্লিতে। তৈরি হয়েছে একাধিক সম্ভাবনা। একদিকে যেমন রয়েছে, ৫ রাজ্যের ভোটের আগে বিজেপির ব্যাকফুটে থাকার তত্ত্ব। তেমনই রয়েছে ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আনার সম্ভাবনা।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বছরের শুরুতে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বড়সড় পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বিজেপিকে। নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপির গোটা শীর্ষ নেতৃত্ব সেখানে প্রচার করলেও, ২২৪ আসনের বিধানসভায় মাত্র ৬৬টি আসন জেতে বিজেপি। বিজেপির দ্বিগুণের বেশি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি চাইছেন না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা হচ্ছে।
এই অংশের মতে, বছর শেষে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের মত রাজ্যে নির্বাচন হবে। এরমধ্যে রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের সরকার রয়েছে। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সরকার থাকলেও দল ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি। কর্ণাটকে ২০১৯ সালে একই কায়দায় কংগ্রেস ভাঙিয়ে সরকার তৈরি করলেও, চলতি বছরে হারতে হয়েছে বিজেপিকে। মধ্যপ্রদেশেও একই ঘটনা ঘটার পরিস্থিতি রয়েছে বলেই বিজেপির সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এর পাশাপাশি রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকার জনপ্রিয়তার নিরিখে খারাপ অবস্থায় নেই। সেক্ষেত্রে ক্ষমতা দখল করা বিজেপির পক্ষে সহজ হবেনা। কিন্তু কংগ্রেসকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলতে গেলে ঐক্যবদ্ধভাবে গোটা দলকে ময়দানে নামতে হবে। কর্ণাটকে যেটা হয়নি। তাই রাজ্যগুলির সংগঠনক বার্তা দিতেই এত আগে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আরও একটি কারণ সামনে আনছেন। তাঁদের বক্তব্য, ২০২৪ বিজেপির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালে আরএসএস’র ১০০ বছর হবে। সেটাকে সামনে রেখে একাধিক পদক্ষেপ ছকেছে বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা সম্পর্কিত কোনও নীল নকশাও ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নের জন্য ২০২৪’র নির্বাচনে জয় পাওয়া প্রয়োজন।
এই অংশের মতে, বর্তমান সময়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির অবস্থা খুব ভালো নয়। যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা তৈরি হয়েছে। মোদী ম্যাজিকও জায়গায় জায়গায় ফিকে হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বিজেপি যদি বোঝে, নির্ধারিত সময়ের আগে লোকসভা নির্বাচন করলে লাভ হবে, তাহলে তাই করা হবে। সেই প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখেই আগেভাগে বৈঠকে বসতে পারে এই কমিটি।
এর সম্ভাবনার নেপথ্যেও একটি অঙ্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশজুড়ে মেরুকরণ তুঙ্গে নিয়ে যেতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন করা হবে। বিজেপির প্রাথমিক হিসেব ছিল, মেরুকরণের হাওয়া এপ্রিল-মে মাস অবধি টানা সম্ভব। সেই সময়েই নির্বাচন হবে। কিন্তু বহু ব্যবহারে ক্ষয়প্রাপ্ত মেরুকরণের হাওয়া যদি ২-৩ মাস না টেকে? সম্মিলিত বিরোধী শক্তি যদি সমস্ত হিসেব গুলিয়ে দেয়? সেক্ষেত্রে নির্বাচন এগিয়ে আনা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই বিজেপির কাছে।
(সৌজন্যে: গণশক্তি)