পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু এলাকায় তৃণমুল কংগ্রেসের ভোটে ধস নেমেছে। অনেকে বলছেন, শান্তিপুর্ন ভোট হলে আরও অবস্থা খারাপ হত তৃণমুলের। সামনেই লোকসভা ভোট। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সেই ভোট হবে। ফলে কারও গা জোয়ারী করার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় সবাই চাইবে জণগণের সমর্থন।
গত সাগরদিঘীর ফলের পর থেকেই শাসক দল টের পেয়েছে সংখ্যালঘু ভোট অন্যদিকে যাচ্ছে। তাই ‘ ক্ষোভের প্রশমন ‘ দরকার। তাই ইমামদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। সেই জন্য ২১ আগস্ট কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বাংলার ইমামদের সম্মেলনে প্রধান বক্তা থাকছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছু ইমাম নেতা সমাবেশ সফল করতে এগিয়ে এসেছেন।
জানা যাচ্ছে, কলকাতায় ইমামদের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ফিরহাদ হাকিম সহ অনেকেই থাকবেন। এই বিষয়টি কিভাবে দেখছেন মুসলিম নেতারা? জমিয়তে আহলে হাদীসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার জানান,” জানিনা সেদিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কী ঘোষণা করা হবে, তবে আশা করা যায় সেদিন হয়তো সামান্য কিছু অনুদান ইমামদের বাড়িয়ে দিতে পারেন। রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে বলবো, বর্তমানে যা দিচ্ছেন তা এতটাই সামান্য যে দৈনন্দিন জীবনে চায়ের খরচও সেটা নয়। যদি তাদের ভাতা দিতেই হয় তাহলে এমন কিছু দিন যা দিয়ে তাদের সংসার নির্বাহ হয়। সাথে সাথে এটাও বলবো, আপনারা মুসলিমদের নিয়ে যত ঢক্কানিনাদ করেছেন, মুসলিম সমাজের জন্য তার কিয়দংশও বাস্তবে করেন নি। এটাও মনে রাখা দরকার, মুসলিম সমাজের ইমামদের কিছু অনুদান দেওয়া মানে সার্বিকভাবে তা জাতির কল্যাণ নয়। সুতরাং মুসলিম জাতি যে তিমিরে ছিল আজও সেই তিমিরেই থেকে গেছে। উত্তরণের জন্য আরও বেশি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার দীর্ঘদিন ধরে কিন্তু মুসলিমদের বোকা বানিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং সামান্য কিছু অনুদান, আর আশ্বস্ত করা এটাই চূড়ান্ত নয়, বরং চূড়ান্ত কাজ হলো বাস্তবে মুসলিমদের কল্যাণ করা। আর এ কল্যাণকর কাজের জন্য সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”
তবে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলায় প্রায় লক্ষাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিন কে মাসিক ভাতা যথাক্রমে ২৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকা কি সরকারি কোষাগার না ওয়াকফ সম্পত্তির আয় থেকে দেওয়া হয়?
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন ওয়াকফ সম্পত্তির অধিকাংশ লুঠপাট ও জবরদখল হওয়া নিয়ে সিবিআই তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি গত ১২ বছরে মুখ্যমন্ত্রী রক্ষা করেননি কেন?
ওইসব মানুষের প্রশ্ন, এখনও পর্যন্ত বাংলায় কত ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে? ওয়াকফ বোর্ড অটোনোমাস হওয়া সত্ত্বেও পোর্টাল আপডেট করা হয় না কেন? ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারে সাচার কমিটির সুপারিশ কার্যকর করা হয়নি কেন?
সোস্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, 2015 সালে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেফতুল্লা দ্বারা গৃহীত ওয়াকফ সম্পত্তির ভাড়া পুনর্বিন্যাস আইন পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর করা হয়নি কেন?
তাদের আরও প্রশ্ন, ইমাম সাহেবরা দাবি দাওয়া (ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার) সংক্রান্ত বিষয় ছেড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের নামে সভার ডাক দিচ্ছেন কেন? মুসলিম জনগণ দ্বারা নিয়োজিত ইমাম সাহেবরা একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাজ্যের সরকারের কাছে ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানাতে চায় কেন?
তারা প্রশ্ন করছেন, ইমাম সাহেবরা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার মাধ্যমে কি মসজিদ কে রাজনীতির আখড়া তৈরি করতে চায়?
সরকার কর্তৃক ভাতা বৃদ্ধি /হ্রাস হওয়ার পরে ইমাম সাহেবরা কি মসজিদ কমিটির কাছে অতিরিক্ত অর্থের দাবি ত্যাগ করবেন?
যেহেতু ইমাম সাহেবরা মুসলিম জাতির রাহবর ও পথ প্রদর্শক, সেহেতু মুসলিম সমাজের পক্ষ হতে আরও কয়েকটি প্রশ্ন :
আনিস হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ অফিসারদের শাস্তির বিষয়ে প্রেস কনফারেন্স করলেন না কেন?
বগটুই গণহত্যা ও রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় মুসলিম জনসাধারণের উপর বর্বরোচিত পুলিশি অত্যাচার এবং মিথ্যা মামলায় মুসলিম যুবকদের ফাঁসানোর বিরুদ্ধে রাজপথে নামলেন না কেন?
সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫৫ জন খুন হওয়া মানুষের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও সমাজের রাহবর হিসেবে ইমাম সাহেবরা চুপ রইলেন কেন?