দীর্ঘ ৪৭ দিন পর সৌদী আরব থেকে মুর্শিদাবাদে ফিরলো শ্রমিকের মৃতদেহ

ইচ্ছে ছিল সুখের সংসার গড়া। কিন্তু এইভাবে যে হটাৎ বিদেশের মাটিতে শেষ বিদায় নিতে হবে তা হয়তো জানা ছিল না। মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার করজোড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজাহান আলী চার বছর আগে দাম্মাম, সৌদি আরবে কাজ করতে যান। প্রথমে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। তার কিছুদিন পর কাজে সমস্যা হবার কারণে তিনি সেখানে কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য এক জায়গায় ঠিকা শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন তার কোনো বৈধ ইকামা কাগজ ছিল না। সেই সময় তিনি বাড়ি আসার অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু হয়ে উঠেনি। ২০২৩ সালের ৫ জুলাই হটাৎ সাজাহান আলীর সঙ্গী তার বাড়িতে খবর দেন যে সাজাহান আলী হার্টঅ্যাটাক করে মারা গেছেন এবং ওখানকার পুলিশ ওর মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এই খবর সামনে আসতেই পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। এই অবস্থায় কী করবে ভেবে পাচ্ছিলেন না।
তারপর মৃতের বাবা আশরাফ আলী বিষয়টি জানান প্রতিবেশী নিমগ্রাম বেলুড়ি হাইস্কুলের শিক্ষক মোঃ কামাল হাসান কে। তারপর কামাল হাসান তাঁর ২ বন্ধু মাহাবুব আলাম (মালদা) এবং সেলিম রেজওয়ান (বেলডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদ)- কে বিষয়টি জানান।
তিনজন মিলে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা সৌদি আরবে অবস্থিত ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দূতাবাসে যোগাযোগ করে করে সম্পূর্ণ বিষয়টি জানাবেন।
সেই মতো মাহাবুব আলাম ৬ জুলাই ভারতীয় দূতাবাস এবং ডেথ সেকশনে যোগাযোগ করেন। ৩ দিন পর দূতাবাস থেকে কামাল হাসানকে ফোন করে সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে চায় এবং কী কী করতে হবে সেটাও জানিয়ে দেয়।
এরপর পুরো পরিবারের সম্পূর্ণ ডকুমেন্টস সহ একটা কোর্ট এফিডেভিট করে দূতাবাসে পাঠানো হয়। দাম্মাম এ কার্যরত মৃতের পাশের গ্রামের দুজন সবুর শেখ ও রাইসুদ্দিন শেখ যুবাইল হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে এসে দূতাবাসে জমা করেন। হাসপাতালে মৃতদেহ রাখার জন্য ভাড়া হিসেবে ১১০০ রিয়াল লাগবে জানানো হয়।
জানা গেছে, মৃত ব্যক্তি যেখানে কাজ করতেন সেখানে ৪ মাসের মজুরির টাকা পেতেন, সেখান থেকেই ওই হাসপাতালের খরচের ব্যবস্থা করা হয়।
সমস্ত ব্যবস্থা হয়ে যাবার পর মৃতদেহ ভারতে পাঠানোর জন্য ১১০০০ রিয়াল খরচ হবে যা ভারতীয় মূল্যে প্রায় 2 লাখ 20 হাজার টাকা। পরিবারকে এবিষয়টি জানানো হয়। পরিবারের লোক এটা শুনতে পেয়ে আরো ভেঙে পড়েন, ভাবেন যে আর হয়তো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে না। এই নিয়ে আবার দুশ্চিন্তা শুরু হয়। পরিবারের তরফ থেকে আবার কামাল হাসানকে জানানো হয় যে আমরা এত টাকার ব্যবস্থা করতে পারবো না। আমাদের সামর্থ নেই। পরিবারের একজন উপার্জনকারী উনি মারা গেছেন এই ভেবে মাহাবুব আলাম ও সেলিম রেজওয়ান আবার দূতাবাসে যোগাযোগ করেন এবং জানান যে পরিবারের তরফ থেকে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় দয়া করে আপনারা ব্যবস্থা করে মৃতদেহ টা পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
কামাল হাসান জানান, তারপর দূতাবাসের তরফ থেকে মাহাবুব আলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং জানান যে সম্পূর্ণ খরচ সরকারি তহবিল থেকে বহন করা হবে।

অবশেষে আজ ২২ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে সাজাহান আলীর মৃতদেহ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
বাড়িতে যখন দেহ এলো তখন গ্রামের মানুষ ভিড় করে। তারপর হল জানাজা। চির বিদায় জানালো পরিবার।

শোকার্ত পরিবার

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও