দিল্লিতে পুলিশকর্মীদের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যার কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ডিউটির উপর চাপ, ওভারটাইম এবং ছুটি না পাওয়া তাদের জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত এই কারণেই অনেক পুলিশ সদস্য অকাল অবসর (ভিআরএস) নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপও নিচ্ছেন কিছু পুলিশ সদস্য।
একটি আরটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি পুলিশের ৪০২ জন কর্মী গত সাড়ে ৫ বছরে ভিআরএস নিয়েছেন। অকাল অবসর গ্রহণকারী কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর, এসিপি এবং ডিসিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ভিআরএস নেওয়ার কারণ হিসেবে তাঁদের স্বাস্থ্য এবং বাড়িতে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও, আরো অনেক পুলিশ সদস্য ভিআরএস-এর জন্য আবেদন করেছেন, যাদের ফাইল অনুমোদনের জন্য বিচারাধীন।
এই পরিস্থিতিতে, পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে প্রতিটি জেলায় আলাদা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট উইং নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। প্রতিটি জেলায় স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সেশন পরিচালিত হয়। এছাড়াও যোগব্যায়াম এবং ধ্যান অভ্যাসও করানো হয়। এসবের জন্য প্রতিটি জেলায় একটি করে প্রশিক্ষণ শাখা রয়েছে। এই ধরনের কর্মসূচি সারা বছর চলতে থাকে, যাতে পুলিশ সদস্যরা তাদের মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করে।
এদিকে, চলতি বছরেও বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল সকালে মজনু কা টিলা এলাকায় পিসিআর ভ্যানের ইনচার্জ ইমরান মোহাম্মদ (৩৮ বছর) গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
২৬ জানুয়ারি ভোরে পাহাড়গঞ্জ থানার ব্যারাকে হেড কনস্টেবল দেবেন্দ্র গুলি করে আত্মহত্যা করেন। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সুইসাইড নোটে, ব্যক্তিগত কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৬মে দিল্লি পুলিশে নিযুক্ত হেড কনস্টেবল অমিত কুমার আত্মহত্যা করেন। চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া অমিতকে তৃতীয় ব্যাটালিয়নে পদায়ন করা হয়েছিল।
বিগত সাড়ে পাঁচ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ৩৫ জন পুলিশ সদস্য। ১ জানুয়ারী, ২০১৮ থেকে ৩১ মে, ২০২৩ পর্যন্ত, প্রায় ৩৫ জন দিল্লি পুলিশ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। কেউ ডিউটি করার সময় নিজেকে গুলি করে তো কেউ তার বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৬ জন পুলিশ সদস্য ভিআরএস নিচ্ছেন। প্রতি বছর আত্মহত্যা করছেন ৬ জন জওয়ান।
তবে এই পরিসংখ্যান সম্পূর্ন নয়। সমস্ত ইউনিট পুলিশের ভিআরএস সংক্রান্ত আরটিআই-এর জবাব দেয়নি। জনবলের অভাবের কথা উল্লেখ করে কোনো কোনো ইউনিট অধিদপ্তরে এসে রেকর্ড যাচাইয়ের কথা বলেছে, আবার কোনো ইউনিট কাগজের পেছনে হওয়া খরচ আগে পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়ে জবাব দেয়নি।পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তরগুলির মধ্যে, যোগাযোগ ইউনিটই একমাত্র ইউনিট যেখানে সর্বাধিক ৪৬ জন কর্মী ভিআরএস নিয়েছেন। এরপরে, বহিরাগত জেলায় ৩৬ জন, দক্ষিণ জেলায় এবং উত্তর পূর্ব জেলায় ৩৫ জন ভিআরএস নিয়েছেন।
দিল্লি পুলিশের পিআরও আইপিএস সুমন নালওয়া বলেছেন, দিল্লি পুলিশের কাজের অবস্থা অন্য যে কোনও পুলিশ বাহিনীর চেয়ে অনেক ভাল। ভিআরএস উদ্বেগের বিষয় নয়, কারণ এর শতাংশ খুবই কম, তবে একজন কর্মচারীর আত্মহত্যা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। তবে, আত্মহত্যার কারণ সবসময় কাজের সাথে সম্পর্কিত নয়। এসব মামলার বেশিরভাগই বিভিন্ন সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রত্যেকের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
সূত্র: দৈনিক ভাস্কর