ক্যাগ বলছে, মোদি জমানায় দুর্নীতি হয়েছে। রেকর্ড বলছে, এমন বেকারত্ব পাঁচ দশকে দেখেনি ভারত। জাতি বিদ্বেষে মণিপুর জ্বলছে। সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর মিলছে দেশের আনাচ-কানাচ থেকে। আর এই সবটাই ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে। নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের ইনিংস শুরুর আগে আচ্ছে দিনের ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ক্ষমতায় এলেই নাকি আচ্ছে দিন এসে যাবে। ১০টা বছর পূর্ণ হতে চলল। এই সব ঘটনা নিশ্চয়ই ‘আচ্ছে দিনের’ পরিচায়ক নয়? নরেন্দ্র মোদি নিজেও বোধহয় সে কথা জানেন। তাই ২০২৩’এ তিনি আর থেমে নেই। ‘আচ্ছে দিন’ কিংবা ‘অমৃতকালে’র সময়সীমা তিনি বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন ২০৪৭ সালে। রবিবার প্রকাশিত পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় জায়গা করে নেবে ভারত। অর্থনীতি আরও বেশি আত্মনির্ভর ও উদ্ভাবনী হয়ে উঠবে। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হবে মানুষ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা পরিষেবা মিলবে।’ অর্থাৎ, আরও ২৫ বছরের অপেক্ষা! বিজেপি সরকার ক্ষমতায় ফিরলেও ‘আচ্ছে দিন’ যে আসবে, সে গ্যারান্টি স্বয়ং মোদিও দিতে পারছেন না। তাই তাঁর বার্তা আড়াই দশক অপেক্ষার। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আরও জানিয়েছেন, ‘তখন দেশে দুর্নীতি, জাতিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতা বলে কিছু থাকবে না।’ এখানেও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। তাদের কটাক্ষ, এখন তাহলে এই সব আছে বলে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিচ্ছেন?
তিনিই সব। বারবার সে কথা প্রকাশ করে এসেছেন মোদি। এদিনও একই ট্রেন্ড বজায় রেখেছেন। বলেছেন, ‘মানুষের ক্ষমতার উপর আস্থাই ছিল না আগের সরকারগুলির। কিন্তু আমার আছে। আমার আমলেই ভারত সম্পর্কে বিশ্বের ধ্যান-ধারণা বদলে গিয়েছে।’ এখানেই থেমে থাকেননি। মোদির দাবি, দেশবাসীর সামনে অভাবনীয় সুযোগ এনে দিচ্ছেন তিনি। ২০৪৭’এর মধ্যেই হাজার বছরের উন্নয়নের ভিত তৈরি হবে।
পঞ্চবার্ষিকী নয়, সঠিক হিসেবে মোদির এই ২৪ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্য দিনভর কটাক্ষের ঝড় বয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো সমস্যায় ধুঁকছে দেশ। এই অবস্থায় ২৫ বছর পরের কল্পনা? দুর্ভাগ্যজনক।’ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়েরও সাফ কথা, ‘২০৪৭ বহু দূর। ২০২৩-এ আচ্ছে দিন কেন আনতে পারলেন না, আগে সেই উত্তর দিন মোদি।’ আসলে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনের উপর ভর করে বিশ্বগুরু হতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই উপলক্ষ্যে রাজধানী এখন বিলাসবাহুল্যের সপ্তম সর্গে। তার প্রসঙ্গ টেনেও পূর্বসূরিদের আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর তাচ্ছিল্য, ‘আগে ভারতকে ১০০ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের দেশ হিসেবে দেখা হতো। এখন সেই ধারণা বদলেছে। সেই ভারতই বর্তমানে ১০০ কোটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দক্ষ মানুষের দেশ।’ স্পষ্ট বলেছেন, রেওড়ি রাজনীতির চরম বিরোধী তিনি। এমনকী জনমোহিনী নীতির ফলে বিভিন্ন রাজ্যকে কেমন অর্থ সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়, সেই প্রসঙ্গ টেনে সমালোচনাও করেছেন। তাঁর মতে, এই সবই দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতি। এতে সাময়িক ফায়দা মিলতে পারে। কিন্তু আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদি সুফল নেই। বিরোধীদের পাল্টা, উন্নয়নশীল দেশকে টিকিয়ে রাখে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিই। সেইসব বন্ধ করে দিলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে? তার জন্য অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে হয়। মোদিজি কি ১০ বছরে তা করেছেন?
মানুষ এখন বাঁচার রসদ খুঁজছে। তাঁদের কাছে ২০৪৭ এক আলোকবর্ষ সম। যদিও প্রধানমন্ত্রী তারই মধ্যে স্বপ্ন ফেরি করছেন। আর বলছেন, ফেক নিউজ থেকে সাবধান। তাতে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। এর পাল্টা অবশ্য এদিনই দিয়েছেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা। তাঁর তোপ, ‘ফেক নিউজ বন্ধ হলে বিজেপিই তো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’
(সৌজন্যে: বর্তমান পত্রিকা)