কর্ণাটকের তথ্য প্রযুক্তি ও বায়োটেকনোলজি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গে, মোহন ভাগবতের একটি মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘মোহন ভাগবত বলেছেন যে আমাদের দ্বারা (২,০০০ বছর ধরে) বৈষম্য হয়েছে… দয়া করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন এই ‘আমাদের’ কারা?’ প্রসঙ্গত, সনাতন ধর্ম সম্পর্কে উদয়নিধি স্টালিনের মন্তব্যের পক্ষে তাঁর মন্তব্যের জন্য উত্তর প্রদেশে তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। চার সেপ্টেম্বর, খড়গে বলেছিলেন, “যদি কোনও ধর্ম আপনাকে সমান অধিকার না দেয়, আপনাকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা না করে, তা ধর্ম নয়”। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এবিষয়ে কথা বলেছেন কর্ণাটকের মন্ত্রী।
পত্রিকার তরফে জানতে চাওয়া হয়, সনাতন ধর্মকে আক্রমণ করা হিসাবে ব্যাখ্যা করা উদয়নিধি স্টালিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানানোর পরে উত্তরপ্রদেশে আপনার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এর জবাবে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেন, আমি দুটি কথা বলেছি বলে তারা আমার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। এক, প্রতিটি ধর্মেরই সমানতা পালন করা উচিত এবং মানুষের মধ্যে বৈষম্য করা উচিত নয়। দুই, সংবিধান আমার ধর্ম কারণ এটি দেশের সকলের জন্য সমতা ও সমান সুযোগ প্রদান করে। তাই তাদের আমার সাথে সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। তারা যদি মনে করে যে আমি যা বলেছি তা ভুল, এটা তাদের সমস্যা, আমার নয়। আমি আমার যুক্তিতে দৃড়।
এরপর পত্রিকার তরফে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার বিরুদ্ধে ধর্মকে রোগ আখ্যা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এটা কি খুব সমস্যার বিষয় যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অত্যন্ত ধর্মীয়?
প্রিয়াঙ্ক খাড়গে এর জবাবে বলেন, আমি বলেছিলাম, যে ধর্ম সমতার দাবি করে না, যে ধর্ম মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে, তা ভালো নয়। এটা সমাজের জন্য ভালো নয়, দেশের জন্য ভালো নয়, জাতি গঠনের জন্য ভালো নয়, অর্থনৈতিক সমতার জন্য ভালো নয়। তাতে কি বিজেপি ও তাদের অনুগামীদের সমস্যা আছে?
পত্রিকার তরফে জিজ্ঞাসা করা হয়, বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের সঙ্গে আপনার তর্ক হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে, প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেন, বি এল সন্তোষ আগের দিন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, অ্যালার্জি আছে। সিস্টেমে অ্যালার্জি আছে এবং পেটে অ্যালার্জির কারণে আপনি মাথা কেটে ফেলবেন না’। দয়া করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন এই অ্যালার্জি কি? তিনি কোন অ্যালার্জি সম্পর্কে কথা বলছিলেন? মোহন ভাগবত (আরএসএস সরসঙ্ঘচালক) একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, ২,০০০ বছর ধরে সামাজিক বৈষম্য রয়েছে। হ্যাঁ, আমাদের দ্বারা ২,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈষম্য হয়েছে।’ অনুগ্রহ করে তাকে জিজ্ঞাসা করুন এই ‘আমাদের’ কারা? দয়া করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন কোন দর্শন বা কোন ধর্ম একজন মানুষ এবং অন্যের মধ্যে বৈষম্য করে। ন্যায়পরায়ণ সমাজ হতে কে বাধা দিল?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে এরপর জানতে চাওয়া হয়, আপনি মতাদর্শগত পার্থক্য নিয়ে আরএসএস নেতাদের বিরুদ্ধে নেওয়া বিশিষ্ট কংগ্রেস কণ্ঠের মধ্যে একজন। আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে এটা কি কংগ্রেসের কৌশল?
এর জবাবে প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেন, এটা কৌশলের প্রশ্ন নয়। এটা সংবিধান রক্ষার কথা। সমাজে সকলকে সমান অবস্থানের অনুমতি দেওয়া, একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠন করা, এগুলোই সাংবিধানিক মূল্যবোধ। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক সমতা দরকার।
পত্রিকার তরফে পরবর্তী প্রশ্ন, আপনার পিতা মল্লিকার্জুন খাড়গে (কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি), যিনি বিজেপি এবং আরএসএসের একজন সোচ্চার সমালোচকও তার সাথে তুলনা করলে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কতটা আলাদা বলে আপনি মনে করেন?
জবাবে, প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেন, আমি পন্থা সম্পর্কে জানি না। আমরা দুজনেই বুদ্ধ, বাসভন্ন এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শ অনুসরণ করি। আমি মনে করি না কোন পার্থক্য আছে।