মুম্বইয়ের রাস্তা থেকে বিদায় নিল মুম্বইয়ের আইকনিক নন-এসি লাল ডাবল-ডেকার বাস। বাণিজ্যের শহর মুম্বাইয়ের একটি আইকন ছিল এই বাসগুলি। ৮৬ বছর ধরে লাল রঙের এই ডবলডেকার বাস গুলি শহরের আম জনতার তো বটেই শহরের পর্যটকদেরও একটি পছন্দের যান বলেই বিবেচিত হয়ে এসেছে। এবার এই বাস জায়গা করে নিল ইতিহাসের পাতায়। নিত্যদিনের যাত্রীরা এবং উৎসাহীরা মুম্বইয়ের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট-এর ইতিহাসের এই প্রিয় প্রতীককে বিদায় জানাতে এর শেষ যাত্রায় সম্মিলিত হন শুক্রবার।
১৯৩৭ সালে এই ডবল ডেকার বাস প্রথম শহরের বুকে চলা শুরু করে। এরপর থেকেই এর বহির্ভাগের লাল রং, এর বসার ব্যবস্থা মুম্বাইয়ের কোলাহলপূর্ণ রাস্তার মধ্যে দিয়ে এর যাত্রা সবমিলিয়ে হয়ে ওঠে মুম্বইয়ের পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
অনেকের জন্যই এই বাস শুধুমাত্র পরিবহনের একটি মাধ্যম ছিল না, ছিল ইতিহাসের পাতায় ঘুরে আসার এক অনন্য উপায়। শুক্রবার এর শেষ যাত্রায় বেশ কিছু মুম্বাইকার এই বাসগুলিতে তাঁদের প্রথম অভিজ্ঞতাগুলি স্নেহের সাথে স্মরণ করেন। জানান তাদের এই ডবলডেকার বাসে করে স্কুলে যাওয়ার দিন গুলির গল্প, পারিবারিক ভ্রমণের গল্প। শুধু তাই নয়, উঠে আসে বেশ কিছু রোমান্টিক ভ্রমণের কাহিনীও।
মুম্বাইয়ের রাস্তা থেকে এই বাসের বিলুপ্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই বাসের যাত্রী এবং বাস উৎসাহীদের এক বিপুল সংখ্যক জমায়েত দেখা যায় বাসটিকে শেষবারের মতো দেখার জন্য। শেষবারের মতো এই আইকনিক বাসের উপরের ডেকে একটি আসন সুরক্ষিত করতে রাস্তায় রীতিমতো ভিড় জমে যায়। শহরের প্যানোরামিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত উপরের ডেকের নস্টালজিয়া শেষবারের মতো উপভোগ করতে ভিড় জমান মুম্বাইকাররা।
এমনই এক যাত্রী আজীবন মুম্বাইয়ের বাসিন্দা রেনুকা শর্মা বলেন, “যতদিন আমি মনে করতে পারি এই বাসগুলি আমাদের জীবনের একটি অংশ ছিল। এর চলে যাওয়া দেখে আমি দুঃখিত, কিন্তু এগুলি আমাদের যে স্মৃতি দিয়েছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ”।
জানা গিয়েছে, মুম্বাইয়ের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে আধুনিকীকরণ করার জন্য এবং ভবিষ্যতে আরো পরিবেশ বান্ধব বিকল্পগুলি প্রবর্তন করার জন্য নন-এসি ডাবল-ডেকার বাসগুলিকে বাতিল করা হচ্ছে। যে ডিপো তে কয়েক দশক ধরে এই বাসগুলি ছিল সেখানে মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন একটি বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এই অনুষ্ঠানে শহরের কর্মকর্তা, পরিবহন কর্মী এবং উত্সাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
মুম্বাইয়ের মেয়র অর্জুন দেশমুখ বলেন, “এই ডাবল-ডেকার বাসগুলি শুধু যানবাহনের চেয়ে বেশি; এগুলি মুম্বাইয়ের স্থিতিস্থাপকতা এবং চেতনার প্রতীক। আমরা তাদের উত্তরাধিকার এবং মুম্বাইবাসীদের প্রজন্মের জন্য তারা যে স্মৃতি তৈরি করেছে তার জন্য গর্বিত”।