মহারাষ্ট্রের হাসপাতালে ৩৬ ঘণ্টায় মৃত ৩১: ওষুধ ও কর্মচারীর অভাবে মারা যাচ্ছে রোগী!

 

 

 

মহারাষ্ট্রে, নান্দেদের শঙ্কররাও চ্যাভান সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২৪ জন মৃত্যুর পরে ১ এবং ২ অক্টোবর আরও ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত ৩৬ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চ্যাবন জানিয়েছেন, মৃত ৭ জন রোগীর মধ্যে ৪ জন শিশু।

দৈনিক ভাস্কর-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে, হাসপাতাল প্রশাসন বলেছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে ১ অক্টোবর রাত ১২টার মধ্যে ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন শিশু, ৭ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছে। হাসপাতালে ৫০০ শয্যার ব্যবস্থা থাকলেও ভর্তি রয়েছেন ১২০০ রোগী। ৭০ জন রোগীর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। অভিযোগ, ওষুধ ও কর্মচারীর অভাবে মারা যাচ্ছে রোগীরা। বিষয়টি ২ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এবিষয়ে হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে জানতে সংবাদমাধ্যমের তরফে চাওয়া হলে তাঁরা (২ অক্টোবর) দিনভর এসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।

দৈনিক ভাস্কর-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতাল প্রশাসন জানিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৪ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একজন রোগীর লিভার ব্যর্থ হয়েছিল। এছাড়া, বিষ সেবনের কারণে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, দুইজন সংক্রমণজনিত কারণে এবং প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে একজন মহিলার মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য মৃত্যুর তদন্ত চলছে।

হাসপাতালের ডিন জানিয়েছেন, এখানে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন। কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর সংখ্যা বাড়ে এবং এটি বাজেটের জন্য সমস্যা তৈরি করে।

অন্যদিকে, সন্ধ্যায় হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শ্যাম রাও ওয়াকোদে জানান, হাসপাতালে সাপের কামড় ও অন্যান্য গুরুতর রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। হাফকাইন কোম্পানি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কর্মচারীদের ক্রমাগত হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হচ্ছে, তাই আমাদের কর্মীদের অভাব রয়েছে।

 

এদিকে, হাসপাতালের ডিন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন ছেলে ও ৬ জন মেয়ে মারা গেছে। আমরা একটি টারশিয়ারি কেয়ার সেন্টার এবং ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। এই কারণে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আমাদের কাছে আসেন।

ডিন আরও বলেন, আমাদের হাফকাইন নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ কেনার কথা হয়েছিল, কিন্তু তা হতে পারেনি। তাই আমরা স্থানীয়ভাবে ওষুধ কিনে রোগীদের সরবরাহ করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর সংখ্যা বাড়ে এবং এটি বাজেটের জন্য সমস্যা তৈরি করে।

এদিকে, এই পরিস্থিতির কথা জানতে পাওয়ার পর এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, নান্দেদের একটি সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু কোনও কাকতালীয় নয়। এসবের তদন্ত হওয়া উচিত।সরকারকে তাঁর প্রশ্ন, মহারাষ্ট্রের মানুষের জীবন কি এত সস্তা হয়ে গেছে? এটি একটি বিলম্ব এবং অবহেলার ঘটনা। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজ্যের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগও নিতে হবে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

 

মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে রোগীদের মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন। রাজ ঠাকরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, বিজেপি, শিবসেনা (শিন্ডে দল) এবং এনসিপি (অজিত গোষ্ঠী)-এর তিনটি ইঞ্জিন সরকার থাকা সত্ত্বেও, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেন্টিলেটরে রয়েছে। তাঁর দাবি, মহারাষ্ট্রের সরকারি হাসপাতালে কোনও ওষুধ নেই। শুধু নান্দেদেই নয়, একই অবস্থা মুম্বই এবং থানেতেও। যক্ষ্মা রোগীদের নিজেদেরই ওষুধ কিনে খেতে বলা হয়।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নান্দেদের হাসপাতালে রোগীদের মৃত্যুকে বেদনাদায়ক বলে বর্ণনা করে বলেছেন, কোন সরকার এত দায়িত্বজ্ঞানহীন কিভাবে হতে পারে? এই লোকেরা সরকার গঠনের জন্য বিধায়কদের ক্রয়-বিক্রয়ে এতই ব্যস্ত যে তারা জনগণের জীবনের কথা চিন্তা করে না।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও