লাদাখ পার্বত্য পরিষদ ভোটে ধরাশায়ী বিজেপি, ২২ আসন পেয়ে জয়ী এনসি-কংগ্রেস জোট

 

 

লাদাখ স্থানীয় নির্বাচনে ধরাশায়ী হল বিজেপি। ২০২০ সালে লাদাখ স্বশাসিত পার্বত্য উন্নয়ন পর্ষদ, লেহ-তে ১৫টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, কার্গিলে ঝুলিতে জুটল মাত্র ২টি আসন। বিজেপিকে ধরাশায়ী করে ২২ আসন পেয়ে জয়লাভ করল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও কংগ্রেস জোট। এর মধ্যে ওমর আবদুল্লার দল পেয়েছে ১২টি আসন এবং কংগ্রেস পেয়েছে ১০টি আসন। পর্ষদের মোট আসন ৩০টি। এর মধ্যে ২৬টি আসনে ভোট হয়েছিল। বাকি চারটি আসন মনোনীত সদস্যদের জন্য ছিল।

লোকসভা নির্বাচনের আগে, লাদাখ হিল কাউন্সিল নির্বাচনের এই ফলাফল কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী জোট দু’পক্ষের কাছেই ছিল লিটমাস টেস্টের মত। আসন্ন পাঁচটি বিধানসভা নির্বাচন ও সামনের বছরের লোকসভা ভোটের আগে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছিল দু’পক্ষের স্নায়ুর লড়াই। একদিকে, বিজেপি দাবি করেছিল, লাদাখকে ২০১৯ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করায় সেখানের প্রভূত উন্নয়ন ঘটিয়েছে মোদী সরকার। অন্য দিকে, এনসি-কংগ্রেস জোটের বক্তব্য ছিল, ‘এনডিএ সরকার ২০১৯ সালের ৫ অগস্টের (অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে বিভাজিত করে দু’টিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা) সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন নাকি গ্রহণ করবেন, তার স্পষ্ট বার্তা দিন।’ একইসঙ্গে এই নির্বাচনেই হওয়ার কথা ছিল ইন্ডিয়া জোটের একটা ছোটমাত্রার পরীক্ষা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেই স্পষ্ট বাতাই দিয়েছেন কার্গিলবাসী। ২০২০ সালের ভোটে লেহ বিজেপিকেই জিতিয়েছিল, কিন্তু ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম স্থানীয় নির্বাচনে সে পথে হাঁটল না কার্গিল। ভোটারদের অধিকাংশই জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে লাদাখের সংযুক্তি চাইছেন। তাঁদের কথায়, ‘আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় আমরা কিছুই পাইনি। আমাদের সন্তানেরা সেই কর্মহীনই। আমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমরা যেমন রাজ্য ছিলাম তেমনই থাকতে চাই।’
ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেস ভোটের আগে জোট ঘোষণা করলেও যথাক্রমে ১৭ এবং ২২ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। দু’দলেরই সাফ বক্তব্য ছিল, যে সব জায়গায় বিজেপি শক্তিশালী এই জোট সেখানে সীমাবদ্ধ। বাকি জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। বারু, শাকর, পরকাচিক, চিত্তন, চোসকোরে রান্ধিপুরা, তাইসুরু এবং পাশকুম আসনে জিতেছে কংগ্রেস। ন্যাশনাল কংগ্রেসও এই ফলে উচ্ছ্বসিত। দলের পক্ষে জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এটা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সুফল। দেশের সংবাদমাধ্যম তো এই ফলকে ব্ল্যাকআউট করবে, কিন্তু বার্তা স্পষ্ট, বিজেপিকে মানুষ চাইছেন না।’ একই কথা বলেছেন কে সি বেণুগোপালও। তিনি কার্গিলবাসীকে এই ফলাফলের জন্য অভিনন্দন জানান।
ন্যাশনাল কনফারেন্স জয়ী হয়েছে কার্গিল টাউন, ঠাসগাঁও, ঠুনিয়া, সিলমু, পোইয়েন, ইওরবালটাক, ভীমবার্ট এবং পদুম আসনে। বিজেপি চা এবং স্টাকচায় বাংগাল আসনে জিতেছে। বারসু আসনটি নির্দলের। ২৬ আসনে ভোটগ্রহণ হয় ৪ অক্টোবর। ৭৭.৬১ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এই ফলাফল দেখে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘বিজেপি তাদের বিভাজনের জবাব পেয়েছে। এটা তাদের জন্য ওয়েক আপ কল। এনসি-কংগ্রেস জোটের কাছে ওরা ধরাশায়ী হয়েছে। আমাদের এনসি-কংগ্রেস প্রার্থীদের গণনাকেন্দ্রের বাইরে পাহারায় সেনা। লাদাখে – পিটিআই জোট জয়ী হওয়ায় আমরা সাধারণ মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কার্গিলের এই ফলাফল স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে যেসব দল অসাংবিধানিক ভাবে ও অগণতান্ত্রিক ভাবে মানুষের মত না নিয়েই জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে ভাগ করেছে, তা অন্যায়। মানুষ তা চায় না।’

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও