দেবিকা মজুমদার
টানটান রহস্যে মোড়া পরিচালক সৃজিত মুখার্জির ওয়েব সিরিজ “দুর্গ রহস্য”-এর পোস্টার লঞ্চ হল সোমবার। পরিচালকের ভাষায়,”আমরা একটু অন্যরকম। পোস্টার দিয়ে সাধারণত শুরু করি, আমরা পোস্টার দিয়ে শেষ করছি।“ এরপরই, প্রকাশিত হয় সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত দুর্গ রহস্যের অভিনব পোস্টার। একঝলকে দেখলে মনে হয় কোনও মরুভূমির শহরে নির্মিত দুর্গের দেওয়ালে খোদিত হয়েছে ওয়েব সিরিজের স্টার কাস্ট অনির্বাণ ভট্টাচার্য(ব্যোমকেশ), সোহিনী সরকার(সত্যবতী) এবং রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জী(অজিত)-র মুখাবয়ব। ১৯ অক্টোবর থেকে হইচই-তে দেখা যাবে এই ওয়েব সিরিজ। এই ওয়েব সিরিজেই নাটকীয় ভঙ্গিতে ব্যোমকেশ হিসেবে নিজের যাত্রা শেষ করার ঘোষণা করলেন অনির্বাণ।
পোস্টার লঞ্চের পরে একটি ছোট ভিডিও প্রকাশ করে অনির্বাণ জানিয়ে দিলেন, আর ব্যোমকেশের চরিত্রে অভিনয় করবেন না তিনি। এই সংক্রান্ত একটি রিলস সোমবার দুপুরে ইনস্টাগ্রামে মুক্তি পায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং হইচই-এর পেজ থেকে। প্রায় দশ মিনিটের এই রিলস দেখে মনে হতে পারে যেন কোনও নাটকের শেষ দৃশ্যের কার্টেন কল চলছে। সাম্প্রতিক কালে তো বটেই, অতীতেও বাংলা ছবি বা সিরিজের ক্ষেত্রে শেষবার কোন অভিনেতা এমন ভাবে কোনও চরিত্র থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন তা মনে করা কঠিন। অভিনেতার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান,”কোনোভাবে দুর্গ রহস্য করার পর আমার মনে হল যে আমার যা সীমাবদ্ধতা অভিনেতা হিসাবে, সব অভিনেতারই তো লিমিটেশান থাকে, আমি বাড়িতে ভেবে দেখলাম, আমার সমগ্র পড়া,আমার মনে হল নতুন কিছু ব্যোমকেশ মানুষটার ভেতর থেকে তুলে আনা বোধহয় আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। সেখানে হয়তো একজন নতুন অভিনেতা বোধহয় আমাদের লাগবে, যে ব্যোমকেশের আন-এক্সপ্লোর্ড দিকটা তুলে আনবে, যেদিক এখনও দর্শক সাক্ষ্য করেনি, সেরকম কারুর কাছেই চরিত্রের যাওয়াটা ঠিক হবে। আমার সীমাবদ্ধতা সমেত আমার যা যা কিছু পৌঁছানর ছিল এই ব্যোমকেশ বক্সী মানুষটা হয়ে দর্শকের কাছে, আমার মনে হয় আমি সেটা পৌঁছে দিয়েছি। আমার ভান্ডার শেষ হয়ে গেছে।“
যদিও, বাংলা ছবির জগতে ইদানীং কান পাতলেই একটা প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে, ‘আর কতবার ব্যোমকেশ হবে?’ কথাটা সম্ভবত কানে গিয়েছিল ব্যোমকেশ চরিত্রে দীর্ঘদিন অভিনয় করা অনির্বাণ ভট্টাচার্যরও। সেই কারণেই হয়তো হইচই-এর নতুন সিরিজ “দুর্গরহস্য” মুক্তির ঠিক আগেই আচমকা বড় ঘোষণা করলেন অভিনেতা। জানিয়ে দিলেন “দুর্গরহস্য”ই হতে চলেছে ব্যোমকেশ চরিত্রে তাঁর শেষ অভিনয়।
অনির্বাণের এহেন বিদায় ঘোষণায় হতবাক অনেকেই। পরিচালক সৃজিতের ভাষায়, মহালয়ার পর পরই যেন বিষাদের সুর বাজিয়ে দিলেন অনির্বাণ। প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বারবার ব্যোমকেশ দেখতে দেখতে তিনি ক্লান্ত। তাঁর এই কথাটা যেন ইদানীং কালে অনেকেরই মনের কথা হয়ে উঠেছে। এমনকী, একই গল্পের উপর তৈরি হওয়া দেবের ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ মুক্তির আগেও তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। যদিও, পরিচালক জানিয়েছেন, শরদিন্দু বাবুর ব্যোমকেশের ফ্লেভার সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যাবে তাঁর এই ওয়েব সিরিজে। সৃজিত জানান,”কিছু সংযোজন করা হয়েছে আমার নিজস্ব সিগনেচার রাখার জন্য। যেহেতু, আমার প্রথম এবং শেষ ব্যোমকেশ করছি, সত্যবতীর উপস্থিতিটা আমি অনেক বেশি চেয়েছি, যেটা গল্পে ছিল না কিন্তু, ব্যোমকেশের চরিত্রায়নের দিক থেকে আমি শরদিন্দুবাবুর গল্পের লাইনের সঙ্গেই থাকার চেষ্টা করেছি”।