নবরাত্রি সারা দেশে উৎসবের করে পালিত হলেও আমাদের দেশেরই এক জনজাতি আছে যারা এই নবরাত্রি তথা দেবী দুর্গার মহিষাসুরের ওপর বিজয়লভের এই অনুষ্ঠানকে শোক হিসেবে পালন করেন। তারা নিজেদের অসুর গোত্রের মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করেন। তাঁদের মতে তাঁরা মহিষাসুরের বংশধর। পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় উৎসব, সেখানেই আসামের সীমান্তবর্তী আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরবাড়ী চা বাগান এলাকায় বসবাস করেন এই অসুর গোত্রের মানুষেরা।
তাঁদের দাবি অনুযায়ী, তাঁরা মহিষাসুরের বংশধর এবং দেবী দুর্গা তাঁদের পূর্বপুরুষকে হত্যা করেছিলেন, তাই এই সময় সুখের নয়, শোকের। এই গোত্রের মানুষেরা পূজার সময় নতুন পোশাক পরেন না বা ছবি তোলেন না।
অসুর উপজাতির এই মানুষেরা শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ঝাড়খণ্ড ও বিহারের কিছু এলাকাতেও বসবাস করেন। তাঁরা নিজেদের পূর্বজদের কাছ থেকে শোনা কাহিনীর ওপরেই বিশ্বাস করেন। তাঁদের মধ্যে প্রচলিত লোককাহিনী হিন্দু পুরাণে বর্ণিত দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের যুদ্ধের গল্পের ঠিক বিপরীত।
চা বাগানের এক অসুর প্রজাতির বাসিন্দারা মতে, রাজা মহিষাসুরের সময় নারীদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখা হত। আমাদের রাজা(মহিষাসুর) নারীর সঙ্গে যুদ্ধ তো দূর, তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্রও তুলতে পারেন না। রঞ্জনের মতে, মহিষাসুর স্বর্গ ও পৃথিবী উভয় লোকেই সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন। দেবতারা ভাবলেন যে মহিষাসুর যদি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন তবে লোকেরা দেবতাদের পূজো করা ছেড়ে দেবে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপক সমর বিশ্বাসের মতে, এই গোত্রের লোকেরা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যা শুনেছে তার উপরেই বিশ্বাস করে। চা বাগানের অপর এক বসবাসকারী অসুর গোত্রের বাসিন্দার মতে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত আমরা শোক পালন করি। এই সময়ে, সমস্ত কাজ রাতে করে নেওয়া হয়। দিনের বেলা ঘর থেকে বাইরে যাওয়া হয় না। মহিষাসুর বধের পর আমাদের পূর্বপুরুষরা দেবতাদের পূজা বন্ধ করে দেন।
সূত্র: দৈনিক ভাস্কর