এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তকে “ইন্ডিয়া”-কে “ভারত” হিসাবে উল্লেখ করার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রস্তাবের পিছনে কি কারণ রয়েছে তা নিয়ে এনডিটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সিআই আইজ্যাকস বলেন, এটি কেবলমাত্র সিবিএসই এবং শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল। এনডিটিভিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আরও বলেন, “বাড়িতে তারা যা কিছু বলতে পারে।”
বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণের মধ্যে, এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং) বলেছে, জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০-র সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাঠ্যক্রম সংশোধনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে করা সুপারিশগুলির বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পাঠ্যপুস্তকে দেশের নাম “ইন্ডিয়া”-র জায়গায় “ভারত” নামটি প্রতিস্থাপন করার পাশাপাশি, প্যানেল “প্রাচীন ইতিহাস”-এর পরিবর্তে “শাস্ত্রীয় ইতিহাস” প্রবর্তনের এবং পাঠ্যসূচিতে “ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা” অন্তর্ভুক্ত করারও পরামর্শ দিয়েছে। এই মুহুর্তে কেন এই পরিবর্তনের প্রয়োজন তা এনডিটিভির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে, প্রফেসর আইজ্যাকস বলেন, তাঁরা কিছু “মুছে ফেলছেন না”। তিনি দেশের শিক্ষানীতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি পরিবর্তনের আহ্বান উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের মানসিকতা ঔপনিবেশিক শিক্ষার দ্বারা আকার দেওয়া হয়েছে। এখন এটি একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা। নতুন অধ্যায়। নতুন কিছুর প্রয়োজন, ঐতিহ্যগত কিছু নয়।“ এই পরিবর্তনকে “অত্যাবশ্যক” বলে অভিহিত করে, তিনি বলেন, এটিতে অনেক শিক্ষাবিদদের সমর্থন রয়েছে যারা কমিটির অংশ ছিলেন না।
এই পদক্ষেপ শিক্ষার রাজনীতিকরণের বিষয়ে বিরোধীদের অভিযোগের আরেকটি প্যান্ডোরার বাক্স খুলবে কি না জানতে চাইলে, আইজ্যাকস বলেন, “আমরা কখনই নির্বাচনের কথা ভাবি না। আমার দলের কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। পাঁচজন মহিলা। গৃহিণী।”
কেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি শিক্ষকদের জন্য। তিনি বলেন, “অবশ্যই শিক্ষকরা বলবেন ইন্ডিয়া।” এপ্রসঙ্গে, ইঙ্গিত ঔপনিবেশিক শিক্ষার ফলাফলকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তিনিও শিকশকদের মতো ইন্ডিয়া বলেন। আইজ্যাকস বলেন, এই পরিবর্তন ৮ম শ্রেণি থেকে শুরু করে সিনিয়র ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকে কার্যকর করা যেতে পারে।
ইন্ডিয়া এবং ভারত সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখিত নাম। কেন, সেই ক্ষেত্রে, এটি ব্যক্তিগত পছন্দের উপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না জানতে চাইলে, তিনি এনডিটিভিকে জানান, এই নিয়ম শুধুমাত্র সিবিএসই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।
প্রশঙ্গত, বিরোধীরা এই প্রস্তাবকে “পুরো প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়ার” প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মনোজ ঝা এটিকে “ইন্ডিয়া ব্লকের আতঙ্কের প্রতিক্রিয়া” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “ইন্ডিয়াই ভারত।” যারা এটি তৈরি করেছিলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকর, নেহেরু, আজাদ, প্যাটেল – তারা কিছু ভেবেছিলেন? এরপর, সংবিধানের কপি হাতে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটাই কি পরবর্তী টার্গেট হবে?’
কংগ্রেসের ডি কে শিবকুমার বলেন, “এটি জনবিরোধী, ভারতবিরোধী। এটা সম্পূর্ণ ভুল। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি। আপনারা ভারতের ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবেন না।”
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়া-ভারত বিতর্ক শুরু হয়েছিল যখন সরকার জি২০ আমন্ত্রণপত্রে “ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রপতি”-এর পরিবর্তে “ভারতের রাষ্ট্রপতি” নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে, নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির নামফলকে ইন্ডিয়ার পরিবর্তে “ভারত” লেখা হয়েছিল।