গাজার হাসপাতালগুলোর একেবারে কাছে এখন যুদ্ধ চলছে

 

গাজার সব প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা, আল-কুদস, আল-রানতিসি এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের একেবারে কাছে এখন ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। শুক্রবার সারাদিন ধরে হাসপাতালগুলোর আশপাশে এবং ভেতরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করে আসছে যে আল-শিফা হাসপাতালের নিচের টানেলে হামাস অবস্থান করছে, যা অস্বীকার করেছে হামাস।

এক নারীর করা একটি ভিডিও বিবিসি যাচাই করে দেখেছে যে, সেটি গাজা শহরের আল-রানতিসি হাসপাতালের ভেতরে করা। সেখানে তিনি বলছেন যে এই শিশু হাসপাতালটি চারদিকে ট্যাঙ্ক দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং এখানে আশ্রয় নেয়া সবাইকে চলে যেতে বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে উত্তর গাজার এই হাসপাতালগুলো নিজেদের সামর্থ্যের ‘চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে’ এবং হাজার হাজার লোকের জীবন এখান ঝুঁকিতে রয়েছে।

আল শিফা হাসপাতালের ডাক্তার সালামিয়া পরিস্থিতিকে ‘ভয়ংকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি তার চারদিকে গুলি এবং বোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন বলে জানান।

অন্যদিকে গাজার আরেকটি হাসপাতাল আল-নাসর থেকে সাদা পতাকা হাতে শিশু ও বয়স্কদের বের হতে দেখা যায়।

হামাস চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের উপর মানুষ মারা গিয়েছে গাজায়, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজারই শিশু।

অন্যদিকে ইসরায়েল তাদের মৃত্যুর তালিকা সংশোধন করে প্রকাশ করেছে। এতদিন তারা মৃতের সংখ্যা ১৪০০ বললেও শুক্রবার দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায় আসল সংখ্যা ১২০০ জন।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লায়র হাইয়াত বলেন, ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার পরপরই যারা মারা যায় তাৎক্ষণিক তাদে রশনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এবং “এখন তারা মনে করে ওগুলো ইসরায়েলিদের নয় বরং হামাস সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ”।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বিভক্ত
গাজা নিয়ে কোন প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কয়েক সপ্তাহ ধরে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত তাতে খুব বেশি আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি হতাশা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে। কারণ তারা গাজা নিয়ে কোন প্রস্তাব পাসে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। জাতিসংঘে ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কোনরকম যুদ্ধবিরতিরও বিপক্ষে।

এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের ১২ জন সদস্যের সমর্থিত আরেকটা প্রস্তাবেও ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র, কারণ তারা মনে করে সেখানে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট শক্ত ভাষা ব্যবহার করা হয়নি।

এছাড়া রাশিয়া ও চীন যুক্তরাষ্ট্রের একটা প্রস্তাবে ভেটো দেয়। তারা বলে যে এটি যুদ্ধের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়ার সবুজ সংকেত হিসেবে কাজ করবে। সবমিলে নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্ত চারবার কোন ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হল। বিষয়টি নিয়ে পুরো নিরাপত্তা পরিষদ এখন বিভক্ত।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এই বিশেষ বৈঠকটি ডেকেছিল। কারণ তারা গাজার হাসপাতালে হামলা ও চিকিৎসা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়া নিয়ে তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরে।

যে বক্তব্যের শেষে ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেদ্রোস আধানম গেব্রেয়েসাস বলেন, বর্তমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে আরও একবার নিরাপত্তা পরিষদকে এক হতে হবে। তিনি কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই কাউন্সিল যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটি আর পালন করতে পারছে না, তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহবান জানান।

এর আগে ইসরায়েল উত্তর গাজায় প্রতিদিন চার ঘণ্টার সামরিক বিরতি শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, এটা খুবই ‘স্থানীয় এবং সামান্য একটা পদক্ষেপ’ যা তাদের ‘যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরাবে না’।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন এই সময়টায় দুটি ‘জরুরি মানবিক পথ’ দিয়ে মানুষজন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে পারবে।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স-আইডিএফ বলছে দুদিনে প্রায় ১ লাখ লোক গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে গিয়েছে।
ইসরায়েলের অতিসত্বর গাজায় নারী ও শিশু হত্যা বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। এলিজি প্যালেসে বিবিসিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এরকম বোমা হামলার ‘কোন যুক্তি নেই’। তিনি মনে করেন যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের জন্যও লাভজনক হবে।

একইসাথে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার বিষয়টি সমর্থন করলেও তিনি বলেন, “আমরা তাদের আহ্বান জানাই গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে’’।

তিনি জোর দিয়ে বলেন ফ্রান্স অবশ্যই হামাসের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়।

ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য অনেক পশ্চিমা দেশের মতো ফ্রান্সও মনে করে হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের নেতাদেরও যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিতে দেখতে চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাক্রঁ বলেন: “আমি আশা করি তারাও এ আহবান জানাবে”।

নেতানিয়াহুর তীব্র প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন অন্য দেশগুলোর হামাসকে নিয়ে নিন্দা করা উচিত, ইসরায়েলকে নিয়ে নয়।

তার দাবি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সংঘাত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, যেখানে হামাস তাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

“আজ হামাস-আইএসআইএস গাজায় যে অপরাধ সংঘটিত করছে তা একদিন প্যারিস, নিউ ইয়র্ক এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে,” এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলেন তিনি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের সাথে যুদ্ধ সমাপ্তির পর ইসরায়েলের গাজা জয়, দখল বা শাসন করার কোন লক্ষ্য নেই। তবে কোন সশস্ত্র বাহিনীর হুমকি ঠেকাতে একটা ‘যথাযোগ্য শক্তির’ সেখানে প্রবেশের দরকার হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও