জমায়েতের নির্দিষ্ট জায়গার অনেকটাই ভরল না। ভরার কথাও ছিল না, যে কারণে আসেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে ব্রিগেডে গীতাপাঠ আসলে যে লোকসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রস্তুতি, স্পষ্ট হয়ে গেল রবিবারই।
বিজেপি’র ভিত্তি সংগঠন আরএসএস’র শাখা বিভিন্ন সংঠগনের কর্মীরাই ছিলেন আয়োজনে। ছিল বজরঙ দল। যে সংগঠনকে ঘিরে বারবার মেরুকরণকে হাতিয়ার করে চরম উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার সকাল ১০টা থেকে মিছিল, আরতি তারপর বেদপাঠ এবং বেলা ১২’২০’তে গীতাপাঠ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সাড়ে বারোটাতেও ব্রিগেডে জমায়েতের জন্য নির্দিষ্ট অংশের বিরাট অংশ ফাঁকাই ছিল।
ব্রিগেডে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠানে আয়োজন করে সনাতন সংস্কৃতি পরিষদ, মতিলাল ভারততীর্থ সেবা মিশন আশ্রম এবং অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদ। অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি’র নেতা-নেত্রীদের। তাঁরাই গত কয়েকদিন এই কর্মসূচির প্রচারও চালাচ্ছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ দিলীপ ঘোষ, লকেট চ্যাটার্জিরা।
মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে আত্মীয়দের দেখে বিমর্ষ অর্জুনকে কৃষ্ণের পরামর্শ সংকলন জমায়েতে পাঠ কেন? সংশ্লিষ্ট অংশ মনে করাচ্ছেন, এই আয়োজন বিক্ষিপ্ত নয়। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব’-র এমনই আয়োজন শেষ হয়েছে শনিবার। জানুয়ারিতেই রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বিজেপি’র অন্যতম শীর্ষনেতা অমিত শাহ ভাষণ দিয়েছেন। মঙ্গলবার দলের জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে নিয়ে কলকাতাতেই আসছেন শাহ।
সিপিআই(এম) নেতৃত্ব মনে করিয়েছেন যে বাংলায় গীতাপাঠের প্রচলন বহু পুরনো। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গীতাপাঠ তো মানুষ ঘরে বসেই করেন। লক্ষ কেন কোটি মানুষ করেন। তার জন্য ব্রিগেডে জমায়েত কেন?’’
আর সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক এবং পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘মন্দির, মসজিদ, গির্জা সবই ছিল, সবই থাকবে। কিন্তু ভোটের আগেই এই আয়োজন রাজনৈতিক ফয়দা তোলা জন্য।’’
আয়োজনকরা ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ কর্মকাণ্ড বলে দাবি করলেও তাকে একেবারেই নস্যাৎ করেছেন বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক স্তরেও এই আলোচনা রয়েছে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখিয়েছে বামপন্থীদের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে। একের পর এক আন্দোলনে, দুর্নীতি থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, রাস্তায় নামতে দেখা যাচ্ছে বামপন্থীদেরই।
অনেকেই মনে করিয়েছেন যে নিয়োগ দুর্নীতির মতো তদন্তে কেন্দ্রের তদন্ত সংস্থার ঢিলেমি কড়া ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। বিজেপি-তৃণমূল যোগসাজস বেরিয়ে পড়ছে। আরএসএস এবং বিজেপি’কে ধর্মীয় মেরুকরণ তীব্র করার দিকে যেতে হচ্ছে দ্রুত।
আরএসএস অনুগামীদের গীতাপাঠের পালটা তৃণমূল কংগ্রেস বিভিন্ন জায়গায় চন্ডীপাঠের কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। তারও বিরোধিতা করেছেন বামপন্থীরা। সেলিম বলেছেন, ‘‘নির্বাচন তো বটেই, রাজনীতিতে এভাবে ধর্মের ব্যবহার আরএসএস’র মতো শক্তিকেই উৎসাহিত করে। মজুরি, ফসলের দাম, বন্ধ স্কুল, বন্ধ কারখানার প্রসঙ্গ হারিয়ে যায়। আরএসএস’র নির্দেশে সেই চেষ্টাই করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।’’ খবর গণশক্তির