২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতে স্থায়ী বসবাসকারী সবাইকে নাগরিকত্ব দিতে হবে, উঠলো দাবী

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিএইচজি বাংলা:

লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের নাগরিকত্বের
বিষয়টি সামনে আনলো সংবিধান বাঁচাও মঞ্চ সহ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার পরের কোন তারিখকে ভিত্তিবর্ষ স্থির করে তার পূর্ব থেকে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারি সবাইকে ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। ভারতে বসবাসের প্রমাণপত্র হিসাবে ইতিমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট দ্বারা নির্ধারিত ১৪ টি দলিলের সঙ্গে আরো কিছু কাগজকে মান্যতা দেওয়া হোক, যাতে ভারতে বসবাসকারী হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি সহ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদান সহজ, সরল এবং স্বাভাবিক হতে পারে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান বাঁচাও মঞ্চের সভাপতি সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস, সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, সিপিআইএমের সুজন চক্রবর্তী ও রেখা গোস্বামী, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং সুখ বিলাস বর্মা প্রমুখ।

মতুয়া, দলিত অন্দোলনের প্রবীণ নেতা লেখক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস জানান, স্বাধীনতার অংশ হিসাবে দেশভাগ এবং বিশেষত বাংলা ভাগের পর ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ ছিন্নমূল এবং বাস্তুহারা হয়ে এদেশে এবং বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে বাধ্য হন। এদের সিংহভাগ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। এদের এক বড় অংশ মতুয়া মতাবলম্বী। বিশ্বে সবথেকে বেশি উদ্বাস্তু মানুষের বসবাস বাংলায়। এই মানুষেরা বরাবরই নাগরিকের অধিকার এবং পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে চলেছেন। নাগরিকত্ব নিয়ে মানুষের কোন সমস্যা ছিল না এবং স্বভাবতই এই বিষয়ে সচেতনতার কোন বাড়তি প্রয়োজন ভারতবাসীর ছিল না। কিন্তু ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব সংশধনী আইন এনে সমস্ত উদ্বাস্তু মানুষকে উনুপ্রবেশকারী ঘোষণা করে। তারপর থেকে আমাদের ধারাবাহিক অন্দোলন চলছে।

তিনি আরও জানান, ২০০৩ সালের সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন ২০০৪ সালের ৩রা ডিসেম্বর। তখন উড়িষ্যায় বিজেপি-বিজেডি সরকার ক্ষমতায়। ওই মাসেই কেন্দ্রপাড়া জেলার মহাকালপাড়া ব্লকের ১৫৫১ জন বাঙালি উদ্বাস্তু মানুষকে বাংলাদেশী অজুহাতে দেশ ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। উড়িষ্যা থেকে কিছু উদ্বাস্তুকে ধরে দেশ থেকে বহিস্কার করা হয়। বলাই বাহুল্য যে, তাঁরা সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই থেকে উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় শুরু হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে বাংলাভাষী মানুষকে বাংলাদেশী তকমা দিয়ে তাদের হেনস্থা করা চলতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তু মানুষকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম খারিজ করার দাবি করে তৃণমূল কংগ্রেস। পার্লামেন্টে এবং নির্বাচন কমিশনেও তারা বারবার এই সংক্রান্ত দাবি তোলে। এর পরিনতিতে বিভিন্ন অজুহাতে অসংখ্য মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। বহু মানুষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, অনেকে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন, বিভিন্ন অত্যাচার ও অসম্মানের সম্মুখীন হয়েছেন। অসমের এন আর সি’র প্রক্রিয়ার ফলাফল দেখার পর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বার বার হুমকির পর, গোটা দেশের উদ্বাস্তু এবং এমনকি ভূমিপুত্র বলে দাবি করা মানুষেরাও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যে যত গরীব তার কাছে কাগজপত্র এবং প্রামান্য নথিপত্রের সুযোগ তত কম। তাদের আশঙ্কা স্বভাবতই সবচেয়ে বেশী। ফলে দেশের মানুষের নাগরিকত্ব সমস্যা ও দেশের নাগরিকত্ব আইন সমস্ত অংশের মানুষের জন্যই এখন বিশেষ মনোযোগ দাবি করে।

এদিন দাবী ওঠে, বাংলার মানুষকে বে-নাগরিক করার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। নাগরিকত্বের জন্য দরখাস্ত এবং নথিপত্র দেখানোর নাম করে মানুষকে ঠকানো চলবেনা। এছাড়া নাগরিকত্ব আইনের ২০০৩ এর সংশোধনীর নির্দিষ্ট তিনটি বিপজ্জনক ধারাকে বাতিল করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলন থেকে দাবী করা হয়, ধর্মীয় অত্যাচার এবং ধর্মীয় অত্যাচারের আশঙ্কা থেকে দেশান্তরে বাধ্য হওয়ার প্রমাণপত্র প্রদান করার আবশ্যিকতা বিযুক্ত করতে হবে। তিনটি দেশ এবং ছয়টি ধর্মের বিশেষ উল্লেখ বিযুক্ত করতে হবে। নাগরিকত্ব বিষয়ে অনিশ্চয়তা রেখে নাগরিক পঞ্জী হতে পারে না।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও