চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস প্রার্থী কুলদীপ কুমারকে নতুন মেয়র ঘোষণা করেছে। সুপ্রিম কোর্ট সব ব্যালট পেপার পরীক্ষা করে দেখেছে। যে ৮টি ভোট অবৈধ ঘোষণা করেছে রিটার্নিং অফিসার অনিল মসীহ, তা সবই বৈধ। শীর্ষ আদালত ভোট গণনার সময় তাঁর সামনে ভুল উপস্থাপনা এবং ‘বেআইনি কাজ’ করার জন্য অফিসারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার আদেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, এটাও স্পষ্ট যে প্রিজাইডিং অফিসার যে ভূমিকা পালন করেছে তা গুরুতর অসদাচরণ। বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রও। আদালত বলেছে, “চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে সিআরপিসি ধারা ৩৪০ এর অধীনে কার্যক্রম শুরু করার জন্য একটি উপযুক্ত মামলা করার প্রয়োজন রয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের আচরণ দুটি স্তরে নিন্দার দাবি রাখে। প্রথমত, মেয়র নির্বাচনে যে নিয়ম রয়েছে, তা বেআইনিভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ১৯ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সামনে গুরুতর বিবৃতি দেওয়ার সময়, প্রিজাইডিং অফিসার মিথ্যা বলেছেন, যার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।”
চণ্ডীগড়ের মেয়র পদে নির্বাচন হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। ৩৫সদস্যের চণ্ডীগড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে বিজেপির ১৪ জন কাউন্সিলর এবং আম আদমি পার্টির ১৩ জন কাউন্সিলর রয়েছে। আকালি দলের একজন কাউন্সিলর এবং কংগ্রেসের ৭ কাউন্সিলর রয়েছে। যখন নির্বাচনের ফলাফল আসে, তখন বিজেপি প্রার্থী মনোজ সোনকর ১৬ভোট এবং কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির প্রার্থীরা ১২ ভোট পান। ৮টি ভোট অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই ঘটনার পর আম আদমি পার্টি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে পৌঁছে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু আদালত আম আদমি পার্টিকে তাৎক্ষণিক স্বস্তি দিতে অস্বীকার করে। এর পরে, আম আদমি পার্টির মেয়র প্রার্থী কুলদীপ কুমার ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে একটি আপিল দায়ের করেন এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। এ বিষয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। এই সময় বেঞ্চ অনিল মসিহের একটি ভিডিওও দেখেছিল। এটা গণতন্ত্রকে উপহাস এবং আমরা এভাবে গণতন্ত্রকে খুন হতে দেব না বলে মন্তব্য করে আদালত। এরপর সুপ্রিম কোর্ট ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ ফুটেজ রাখার নির্দেশ দেয়।
চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচন নিয়ে ঐতিহাসিক রায় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ বলেছিলেন, অনিল মসিহ (প্রিসাইডিং অফিসার) গণতন্ত্রকে হত্যার বিজেপির ষড়যন্ত্রের একটি প্যাদা মাত্র। এর পেছনে রয়েছে মোদির মুখ। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও। তিনি বলেন, নির্বাচনী কারচুপির নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেওয়া স্বৈরাচারী বিজেপির দাঁত থেকে সুপ্রিম কোর্ট গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে। চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে কারসাজি গণতন্ত্রকে চূর্ণ করার জন্য মোদী-শাহ ষড়যন্ত্রের একটি অংশ মাত্র। সকল দেশবাসীকে সম্মিলিতভাবে সংবিধানের উপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। আমরা এটা ভুলব না, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমাদের গণতন্ত্র ঘুরে দাঁড়াবে।