সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে গত সোমবার ইসরায়েল হামলা চালায়। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশ শাখার শীর্ষ জেনারেলসহ ১৩ জন নিহত হন। এ হামলার জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তবে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের কতটুকু, সে প্রশ্ন রয়েছে। কনস্যুলেটে হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশ শাখা আল-কুদস বাহিনীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি নিহত হয়েছেন। অবশ্য বরাবরের মতো এবারও হামলার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। এ হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘তাঁর মানসিক ভারসাম্য পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন’।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফাওয়াজ গার্জেস বলেছেন, ইরান ‘কাগুজে বাঘ’ এমনটা দেখাতেই এই উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে। এ হামলায় কুদস বাহিনীর বড় ধরনের ক্ষতিও হয়েছে। লেবানন ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে সমন্বয় এবং অস্ত্র ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে এই বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে দামেস্কের কনস্যুলেটে হামলার জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ ও সংখ্যা বিবেচনায় ইরানের সামনে বিকল্প সীমিত বলে বিবিসিকে বলছেন গার্জেস ও অন্য বিশেষজ্ঞরা।মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক লেখক ও বিশ্লেষক আলি সদরজাদেহ বলেন, ‘সামরিক সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসরায়েলের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে যাওয়ার সামর্থ্য ইরানের নেই। তবে অভ্যন্তরীণ চাপ এবং আঞ্চলিক মিত্রদের কাছে নিজের সুনাম ধরে রাখতে দেশটিকে কিছু একটা জবাব দিতে হবে।’ গার্জেস বলছেন, ইরান সম্ভবত সরাসরি ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাবে না, যদিও ইসরায়েল প্রকৃতি অর্থেই ইরানকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে এবং আপাতদৃষ্টিতে ধরাশায়ী করেছে। তিনি আরও বলছেন, ইরান সম্ভবত ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখিয়ে যাবে। কারণ, দেশটির এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের প্রতি জোর দিচ্ছে। আর সেটা হলো পারমাণবিক বোমা তৈরি। সদরজাদেহ মনে করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর চেয়ে ইরান সম্ভবত ‘প্রতীকী’ জবাব দিতে পারে।
ইসরায়েল ও ইরানের সামরিক সক্ষমতার তুলনা
অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানও সামরিক প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে। সামরিক সক্ষমতায় কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’ ওয়েবসাইট। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম। ওয়েবসাইটটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরা হলো:
নিয়মিত সেনা
ইরান: ৬ লাখ ১০ হাজার
ইসরায়েল: ১ লাখ ৭০ হাজার
রিজার্ভ সেনা
ইরান: ৩ লাখ ৫০ হাজার
ইসরায়েল: ৪ লাখ ৬৫ হাজার
আধাসামরিক বাহিনী
ইরান: ২ লাখ ২০ হাজার
ইসরায়েল: ৩৫ হাজার
মোট সামরিক উড়োজাহাজ
ইরান: ৫৫১টি
ইসরায়েল: ৬১২টি
যুদ্ধবিমান
ইরান: ১১৬টি
ইসরায়েল: ২৪১টি
হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান
ইরান: ২৩টি
ইসরায়েল: ৩৯টি
পরিবহন উড়োজাহাজ
ইরান: ৮৬টি
ইসরায়েল: ১২টি
হেলিকপ্টার
ইরান: ১২৯টি
ইসরায়েল: ১৪৬টি
হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার
ইরান: ১৩টি
ইসরায়েল: ৪৮টি
ট্যাংক
ইরান: ১ হাজার ৯৯৬টি
ইসরায়েল: ১ হাজার ৩৭০টি
সাঁজোয়া যান
ইরান: ৬৫ হাজার ৭৬৫টি
ইসরায়েল: ৪৩ হাজার ৪০৩টি
যুদ্ধজাহাজ (ফ্লিট)
ইরান: ১০১টি
ইসরায়েল: ৬৭টি
সাবমেরিন
ইরান: ১৯টি
ইসরায়েল: ৫টি
ইরান ও ইসরায়েলের রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। বিশেষ করে ইসরায়েলে ‘আয়রন ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য ঈর্ষণীয়। এ ছাড়া দেশ দুটির হাতে রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও হামলার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বহু ড্রোন। ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক বোমা থাকলেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলে না দেশটি। এসব বিষয় গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যে উল্লেখ নেই। (তথ্য: প্রথম আলো)