একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ-পরবর্তী কোনো পরিকল্পনায় সমর্থন দেবে না সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেন, ‘একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়া গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনায় সমর্থন দিতে প্রস্তুত নয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।’ সৌদি আরবও জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।
গত মে মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অনলাইনে গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী এক পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি দাবি করেন, যখন ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে তখন ফিলিস্তিনিরা ‘অতুলনীয় সমৃদ্ধি উপভোগ করবেন’। পরিকল্পনার বিষয়বস্তুর মধ্যে বিভিন্ন বন্দর, সৌরবিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ করা এবং গাজায় নতুন আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সুবিধা আদায় করার কথাও রয়েছে। অনির্ধারিত ‘বিজয়ের তারিখ’ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে তিন ধাপে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজাবাসী ইসরাইলি দখলদারির অধীনে এ পরিকল্পনা কার্যকর করবেন। আর এই রূপরেখা তদারক করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, জর্দান ও মরক্কোর সমন্বয়ে আরব দেশগুলোর একটি জোট। নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়ে আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বলেন, ‘তিনি (নেতানিয়াহু) এমন পদক্ষেপের বাস্তবায়ন বা এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার বৈধ কর্তৃপক্ষ নন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলছি, গাজা পরিকল্পনার বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে কোনো পরামর্শ করা হয়নি।
উপরন্তু, গাজায় ইসরাইলের উপস্থিতিকে বৈধ করার লক্ষ্যে করা যেকোনো পরিকল্পনায় ইউএই যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।’ যখন একটি ফিলিস্তিনি সরকার গঠিত হবে, যে সরকার ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে এবং সততা, যোগ্যতা, স্বাধীনতা ও সম্মানের সাথে পরিচালিত হবে; আরব আমিরাত তাকে সব ধরনের সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ।
অন্যদিকে লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউজের এক আলোচনা সভায় সৌদি আরবের গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল বলেছেন, ‘একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা শুধু সৌদি আরবের সাথেই নয়, বাকি মুসলিম বিশ্বের সাথেও ইসরাইলের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
সৌদি আরবের এই কূটনীতিক আরো বলেন, ‘ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সৌদি আরবের কাছে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রাথমিক শর্ত, কিন্তু ইসরাইলের পক্ষ থেকে দেশটির পুরো সরকার বলছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলতে কিছু নেই।’ এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, সৌদি আরব ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসরণ করে পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকবে। সূত্র: নয়া দিগন্ত