বিধায়ক নওশাদ এবং আইএসএফ কর্মীদের নিগ্রহের নিন্দায় সিপিএম,ওয়েলফেয়ার পার্টি

বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী এবং আইএসএফ কর্মীদের নিগ্রহের নিন্দা করলো সিপিএম ও ওয়েলফেয়ার পার্টি। এক বিবৃতিতে মুহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ভাঙড়ে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি, আইএসএফ কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপরে তৃণমূলের হামলার তীব্র নিন্দা করছি।’’ তিনি দাবি করেন, আইএসএফের মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভাঙড়েও তৃণমূলের তরফে হামলা হচ্ছে।

এদিকে আইএসএফ কর্মীদের উপর পুলিশী আক্রমণের নিন্দা জানালো ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া পশ্চিমবঙ্গ শাখা। দলটির রাজ্য সভাপতি মনসা সেন, রাজ্য সম্পাদক সারওয়ার হাসান আক্রান্ত আইএসএফ কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। ওয়েলফেয়ার পার্টির রাজ্য সভাপতি মনসা সেন এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, সভা সমিতি, মিছিল,বিক্ষোভ করার অধিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবার আছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আইএসএফ কলকাতায় সভা করেছিল। ভাঙড়ে তাদের কর্মীদের উপর হামলা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের আরাবুল ইসলাম সহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের দাবিতে ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ করে আইএসএফ। কিন্তু সেই বিক্ষোভে পুলিশ আক্রমণ করে, নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
তিনি আরও বলেন, এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতি করার যতটুকু অধিকার আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ততটুকুই অধিকার আছে। কিন্তু গোটা রাজ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই মানুষ এর জবাব দেবে।

ওয়েলফেয়ার পার্টির রাজ্য সভাপতি মনসা সেন দাবি করেন, বিধায়ক নওশাদের গাড়িতে হামলা হয়েছে। অবিলম্বে ভাঙড়ের দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে। বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে মুক্তি দিতে হবে।

তবে পুরো ঘটনার জন্য আইএসএফকেই দায়ী করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল ঘোরার পর কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানান, পুলিশকে বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, আন্দোলনকারীদের সংশ্লিষ্ট স্থানে বসতে বারণ করা হয়েছিল। তা-ও তারা বসেছিলেন। পুলিশ তুলতে গেলে তাদের আক্রমণ ধেয়ে আসে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার আরও জানান, এই ঘটনায় পনেরো জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ডিসি সেন্ট্রাল, ডিসি সেন্ট্রাল-২, ডিসি সাউথ, বৌবাজার থানা এবং হেয়ার স্ট্রিট থানার আইসিও। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠা দিবসে শনিবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলকাতা। এদিন ভাঙড়ের আইএসএফ কর্মীদের উপর তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা মারধর করে বলে অভিযোগ। বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর গাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। নওশাদ সিদ্দিকী এই ঘটনায় ভাঙড়ের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আরাবুল ইসলাম সহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এমনকি রানী রাসমণি রোডের সভা থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, আরাবুলদের গ্রেফতার করা না হলে রাস্তা অবরোধ হবে। সভা শেষ হলেও আরাবুলদের পুলিশ গ্রেফতার না করায় ধর্মতলায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে আইএসএফ কর্মীরা। এর ফলে স্তব্ধ হয়ে যায় মধ্য কলকাতার যান চলাচল। দলটির নেতারা জানান, ‘যতক্ষণ না তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডা দমন না হচ্ছে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।’ স্লোগান ওঠে,’অবিলম্বে ভাঙড়ের গুন্ডাদের গ্রেফতার করতে হবে’। এমনকি পুলিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ওঠে স্লোগান।
ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখানোর পর তাঁদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। কার্যত টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় ভাঙরের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে। পরে তাঁকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশ। পাল্টা পুলিশকে আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে নওশাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। উন্মত্ত জনতাকে থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। এরপর পাল্টা বাঁশ, লাঠি নিয়ে পুলিশকে তাড়া করেন আইএসএফের কর্মীরা। পুরো এলাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো অবস্থা হয়। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে পুলিশ ও আইএসএফের একাধিক জন আহত হয়েছেন।
বিধায়ক মুহাম্মদ নওশাদ সিদ্দিকী পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় হলে এ রকম ঘটত না। আইএসএফ কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।’’
এদিকে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী আইএসএফ কর্মীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা করেছেন। বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও নওশাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও