শেখ কুতুবুদ্দিন:
‘লে-লে মজা লুটে লে!’ ড্রিঙ্ক করে প্রাক্তনীদের অনেকেই যখন স্বপ্নদীপকে নিয়ে হই-হুল্লোড়ে মেতেছিল, তখন মনে মনে অনেক আবাসিক বিরক্ত হয়েছিল। তবে ওই প্রাক্তনী র্যাকেটদের ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। হস্টেলে থাকা আবাসিকদের কাছ থেকে এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে।
শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও হাতেগোনা পড়ুয়াদের ছিল আনাগোনা। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে পাওয়া গেল। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হস্টেলের ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে প্রথমে কেউ মুখলতে না চাইলেও পাশে থাকা এক পড়ুয়া বলে উঠল, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বন্ধু আমাকে সব কথা বলেছে।
তবে তার নাম বলেনি। বুধবার রাতে যখন পড়ুয়ারা মদ্যপান করে উল্লাসে মেতেছিল, তাতে মজা পেতে কেউ কেউ র্যাগিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাঁকে অশ্লীল ভাষায় বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। এমনকী ভিডিয়ো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় কেউ কেউ। এই শুনে ভয় পায় স্বপ্নদীপ। কথাও বের হচ্ছিল না। ‘মা-খু-চিহল পঞ্চম হস্তম’ অর্থাৎ কয়েদির মতো। মাঝে মাঝে বলছিল ‘আমি সমকামী নই’। রাত যত গড়াচ্ছিল ততই বাড়ছিল স্বপ্নদীপের আতঙ্ক। গামছা পরেই কেটেছিল অর্ধেক রাত।
‘আর থাকতে পারছি না। সহ্য করতে পারছি না।’ কাঁদতে কাঁদতে বার বার হস্টেলের চারতলা আর নিজের রুম তিনতলা করতে হচ্ছিল। প্রাক্তনীরা থাকত চারতলায়। আর সেখানেই থাকত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আরিফ সেখ। জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা সে। আর থাকত হাসান গাজি। হস্টেলের ওই ফ্লোরে থাকা আবাসিকদের কাছ থেকে জানা গেল, হইচই, উল্লাসে মাততে দেখা যায়নি হাসানগাজি ও আরিফকে।
স্বপ্নদীপকে উলঙ্গ করে নাচতে বলা হয়। অশালীনভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রথমে বাইরে বের হতে চায় স্বপ্নদীপ। কিন্তু তাকে বের হতে দেওয়া হয়নি। বের হতে না পেরে তিনতলার ব্যালকনিতে গিয়ে নামার চেষ্টা করে। ঠিক সেই সময় দেখে ফেলে জম্মু ও কাশ্মীরের আরিফ। স্বপ্নদীপকে দেখে কী হচ্ছে জানতে ছুটে যায় সে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
স্বপ্নদীপ যেখানে পড়ে যায়, তার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আর এক পড়ুয়া। ফোনে কথা বলছিল সে। একজনকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে ছুটে যায় সে। হস্টেল থেকে অনেকেই তখন পালাতে ব্যস্ত। হাসান গাজি নামে এক হস্টেলের পড়ুয়াও ছুটে আসে। সবার আগে সে-ই উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্নদীপকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই স্বপ্নদীপের মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানান। স্বপ্নদীপকে বাঁচাতে অনেকে এগিয়ে না এলেও আরিফ ও হাসান গাজি চেষ্টা করেছিল যাদবপুরের পড়ুয়াদের অনেকেই স্বীকার করেছেন। তবে এদিন আরিফ ও হাসানগাজিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আরিফ ও হাসানের এই উদ্যোগের কথা নিয়ে তাঁদের বন্ধুমহলে চর্চা হচ্ছে। তাঁদের থেকেই এমনটা শোনা গিয়েছে।
(সূত্র : পূবের কলম)