২৫ হাজার ‘ভুল’ শংসাপত্র, চক্রান্ত ফাঁস, রায় – মন্ডল – মাহাতোদেরও এসটি সার্টিফিকেট

প্রীতেশ বসু, কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন থেকে শিক্ষক নিয়োগ। ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দাখিল করে অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার একাধিক অভিযোগ আগেই ছিল। মামলাও হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এই আবহে সামনে এল জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে বড়সড় ‘ভুল’। জানা গিয়েছে, রাজ্যজুড়ে ২৫ হাজারের বেশি ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র বণ্টন হয়েছে। যোগ্য প্রাপক না হয়েও শংসাপত্র বাগিয়ে নিয়েছেন বহু মানুষ। তবে নবান্ন মনে করছে, এক-দু’টি ক্ষেত্রে ভুলচুক হওয়ার সুযোগ থাকলেও এত বিপুল সংখ্যায় ভুয়ো শংসাপত্র ইস্যরি পিছনে রয়েছে সংগঠিত চক্রান্ত। সরকারকে অপদস্থ করতে আধিকারিকদের একাংশ এবং কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে এই কাণ্ড বলে আশঙ্কা তাদের।
সূত্রের খবর, ২৫ হাজার ভুয়ো শংসাপত্র প্রাপকের মধ্যে ‘মাহাত’ বা ‘মাহাতা’ পদবির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জন রয়েছেন। তাঁদের তফসিলি উপজাতির (এসটি) শংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। শনিবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর উপস্থিতিতে বৈঠকে এই তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। তখনই এর সঙ্গে জড়িত কর্মী বা আধিকারিকদের চিহ্নিত করে শোকজের নির্দেশ দেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা। সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে পারে রাজ্য। খড়্গপুর এবং রানিগঞ্জের দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গে কিছু জায়গায় বইগা সম্প্রদায়ভুক্ত মাহাত পদবির মানুষ আছেন। তাঁরা আগে থেকেই এসটি ছিলেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাহাত পদবির মানুষজন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তালিকাভুক্ত। বইগা সম্প্রদায়ের অধিকাংশের কাছে এসটি শংসাপত্র আগে থেকে আছে। তাহলে নতুন করে কারা পেলেন শংসাপত্র? এই প্রশ্ন উঠতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২৫ হাজার নামের জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের জানিয়ে দেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের সচিব সঞ্জয় বনশল। আরও দেখা যায়, রায়, মণ্ডল (প্রাপ্ত উপাধি বাদ দিয়ে), এমনকী কিছু ক্ষেত্রে চট্টোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায় পদবির লোকজনও এসটি সার্টিফিকেট পেয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের দ্রুত কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ভুল করে’ ইস্যু হওয়া প্রতিটি শংসাপত্রের তথ্যানুসন্ধান করে তা বাতিল করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আগামী দিনে এই শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে।
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ‘মাহাত’-কে এসটি সার্টিফিকেট দেওয়া প্রসঙ্গে কুড়মি সমাজের প্রতিনিধি রাজেশ মাহাত বলেন, ‘আমরা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্যই লড়ছি। কেন্দ্র এখনও সেই ছাড়পত্র দেয়নি। তার আগেই মাহাতদের এসটি শংসাপত্র দেওয়া হয়ে থাকলে তার দায় প্রশাসনের।’ বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘জেনারেল ক্যাটিগরির মানুষও তফসিলি জাতির শংসাপত্র পাচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। প্রশাসন কড়া ব্যাবস্থা নিচ্ছে।’ সূত্র: বর্তমান পত্রিকা

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও