বিশ্বকর্মার ঘুড়ির “চীনা মাঞ্জা”-র শিকার পক্ষী দম্পতি

 

দেবিকা মজুমদার

বিশ্বকর্মা পুজো মানেই ঘুড়ি। আর ঘুড়ি মানেই তাতে চাই মাঞ্জা দেওয়া সুতো। প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজো আসতেই শহর এবং শহরতলী জুড়ে শুরু হয়ে যায় “চীনা মাঞ্জা”-র দাপট। কয়েক বছর ধরেই রাস্তায়, বিশেষত উড়ালপুলে বিপদজনক চীনা মাঞ্জায় আহত হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। শুধু মানুষ নয়, এই বিপদজনক চীনা মাঞ্জার শিকার হয় মানুষদের থেকেও অনেক বেশি পাখিরা। স্টুডেন্ট হেলথ হোমের বিশিষ্ট ডক্টর পবিত্র গোস্বামী হিন্দুস্থান গেজেট-কে জানিয়েছেন তাঁর চোখে দেখা এমনই একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পাইকপাড়ায় তাঁর বাড়ির ছাদে চীনা মাঞ্জায় আহত হয়ে প্রাণ যায় একটি পাখির। মৃত পাখিটির কাছে দীর্ঘক্ষণ তার সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে তার সঙ্গী পাখিটি। বহুক্ষণ বসে থাকার পর শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র উড়ে যায় পাখিটি। পবিত্র গোস্বামী জানিয়েছেন, তাঁর পাড়ায় বিভিন্ন গাছেও জড়িয়ে রয়েছে এই বিপদজনক চীনা মাঞ্জা। তিনি নিজে বহু কষ্ট করেও খালি হাতে এই বিপদজনক মাঞ্জা ছিঁড়ে ফেলতে পারছেন না।
পবিত্র গোস্বামীর প্রশ্ন, “সরকারের ঘুম ভাঙবে কি? মানুষের চেতনা কবে হবে?” হিন্দুস্তান গেজেটকে পাঠানো তাঁর বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, “ঘুড়ি ওড়াতে ব্যবহৃত এই ভয়ঙ্কর “চীনা” সূতো গাছে গাছে আটকে যাচ্ছে। মানুষের হাত থাকা সত্ত্বেও আমিই ছিঁড়তে পারছি না, ওরা কি করে ছেঁড়ে? তাই এই অসহনীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে হল। চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলাম না। রক্তাক্ত মৃত পাখিটির পাশে বসে আছে ওর সঙ্গী/সঙ্গীনি- মা, বাবা, ভাই, বোন না প্রেমিক/প্রেমিকা?
কে জানে! ও ভাবেই বসে ছিল দীর্ঘক্ষণ। তার পর উড়ে গেল অসহায়। ডানার ঝাপটানিটা একদম্ অন্য রকম।…মানুষ তুমি কবে বুঝবে যে পৃথিবী তোমার একার নয়?”
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর ধরে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটায় ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত দেশ জুড়ে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ করেছিল। জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারম্যান, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে বলেছিল। নির্দেশে বলা হয়েছিল, দেশে ওই মাঞ্জা সুতো তৈরি, মজুত ও কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশের প্রধানকে ওই নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠিয়ে চিনা মাঞ্জায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করতে বলা হয়। এই সুতো বা মাঞ্জার উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। বলা হয়েছিল, নির্দেশিকা অমান্য করে কেউ চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতো ব্যবহার করলে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ রক্ষা আইন এবং ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সুপ্রিম কোর্টেও সেই নির্দেশ বহাল রাখা হয়।
অথচ, তার পরেও সাধারণ মানুষের টনক নড়েনি। অভিযোগ, চিনা মাঞ্জার বিক্রি বন্ধ হয়নি। কলকাতা এবং শহরতলি জুড়ে রমরমিয়ে চলেছে এই সুতোর বিক্রি এবং ব্যবহার। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, ক্রিক রো, বাঘা যতীন-সহ একাধিক এলাকার ঘুড়ি বাজারে রীতিমতো ১০০ টাকা মিটারে বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে চিনা মাঞ্জা। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনার বহু বাজার থেকেও শহরে এমন সুতো ঢুকছে। শুধু কলকাতাতে নয়, এই চীনা মাঞ্জা দেদার বিক্রি হয়েছে হুগলিরও বহু জায়গায়। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর অঞ্চলে ঢালাও বিক্রি হয় চিনা মাঞ্জা। ক্রেতারা ভিড় করেন ঘুড়ির দোকানে। খবর পেয়ে, চিনা সুতো যেসব দোকানে বিক্রি হচ্ছিল, সেখানে অভিযান চালায় উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় বিপুল পরিমাণ চিনা মাঞ্জা।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও