আল-আকসার বিজয় ও গাজী সালাহউদ্দীন আইয়ুবী

 

আলী ওসমান শেফায়েত

এক.
মৃত্যুশয্যায় শায়িত মহাবীর সাইফুল্লাহিল মাসলুল খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা: ব্যাকুল হয়ে কাঁদছিলেন। কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমার শরীরে তাকিয়ে দেখো। একটি আঙুলের সমান জায়গাও কি বাকি আছে যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই? আজ আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে বিছানায় শুয়ে। বড় স্বাদ ছিল আল্লাহর রাহে শহীদ হবো।
উলামায়ে কেরাম বলেন, খালিদ রা:-কে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করতেই হতো। কারণ সায়িদে কাউনাইন সা: তাঁকে সাইফুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। যদি খালিদ যুদ্ধাবস্থায় শত্রুর আঘাতে প্রাণ দিতেন, তবে মনে হতো আল্লাহর তরবারি ভেঙে গেছে; এমনটি হতেই পারে না। কার্যসমাধা শেষে আল্লাহ তাঁর তরবারিটি নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।

খালিদ রা:-এর তিরোধানের ৪৯৫ বছর পর, ১১৩৭ সালে ইরাকের তিকরিতের এক কুর্দি পরিবারে নজমুদ্দীন আইয়ুবের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন আল্লাহর আরেক তরবারি। নাজমুদ্দীন পুত্রের নাম রাখেন ইউসুফ। গভর্নর নিজামুল মুলকের মাদরাসায় পড়ালেখা করে কেটে যায় বাল্যকাল। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পাশাপাশি দামেস্কের আমির সুলতান নুরউদ্দীন জংগী রহ:-এর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন ইউসুফ। এরপর চাচা আসাদুদ্দীন শিরকুহর তত্ত্বাবধানে ফাতেমি শাসক আল-আদিদের পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। প্রসঙ্গত, আব্বাসি খেলাফতের ক্ষয়িষ্ণুতাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিশ্বের নানাদিকে প্রচুর স্বতন্ত্র শাসন গড়ে উঠেছিল। ফাতেমিরা ছিল এর অন্যতম।
শিরকুহর মৃত্যুর পর আল-আদিদ ইউসুফকে মিসরের গভর্নর পদে আসীন করেন। নুরউদ্দীন প্রতিবাদ করেননি। তিনি জানতেন, শিয়া শাসকের অধীনে উজির হলেও ইউসুফ একনিষ্ঠ সুন্নি ও তারই হাতে গড়া তাসাউফের অভিনিবিষ্ট খাদিম। ১১৬৯ সালে নুরউদ্দীন জংগীর নির্দেশনায় ইউসুফ প্রথমবার ক্রুসেডারদের বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং বিজয় লাভ করেন। ইতোমধ্যে তার ইউসুফ পরিচয়টি হারিয়ে গেছে। তিনি হয়ে উঠেছেন আল্লাহর সিংহ সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। ইতিহাস আরেক খালিদের উপাখ্যান রচনা করবে বলে কলম-কালি প্রস্তুত করছে।

দুই.
একটু পেছনে ফিরে যাই। ৬৩৭ সাল। উত্তপ্ত সাহারা পেরিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের পানে ছুটে চলেছেন আমিরুল মু’মিনিন উমর ইবনে খাত্তাব রা:। বহুদিন ধরে জেরুসালেম অবরোধ করে রেখেছে আবু উবায়দাহ ইবনে জাররাহ রা: এবং খালিদ রা:-এর নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী। খ্রিষ্টানদের দাবি, তারা খলিফার হাতেই জেরুসালেম সোপর্দ করবে। অবশেষে উমার রা: জেরুসালেমে পদার্পণ করলেন। উম্মতে মুহাম্মাদির হাতে আল-কুদস বিজিত হলো। মুসলমানদের প্রথম কিবলায় আজানের ধ্বনি শোনা গেল।
ইউরোপের খ্রিষ্টানরা ক্রুশ ছুঁয়ে জেরুসালেম পুনর্দখলের শপথ করল। ১০৯৯ সালে আব্বাসি ও ফাতেমি খেলাফতের দৈনতা এবং কিছু স্বার্থপর মুসলিম শাসকের ভীরুতার সুযোগে সারা ইউরোপ একজোট হয়ে আক্রমণ করল সিরিয়া ও ফিলিস্তিন। রক্তের বন্যা বইয়ে জেরুসালেম দখল করল ক্রুসেড বাহিনী। প্রায় ৭০ হাজার মুসলিম নর-নারীকে চরম নির্মমতায় শহীদ করা হলো। ক্রুসেডারদের ঘোড়ার পা মুসলমানদের রক্তে ডুবিয়ে সম্পন্ন হলো খ্রিষ্টানদের প্রথম ক্রুসেড। ৪৬২ বছর পর আল-কুদস আবার খ্রিষ্টানদের দখলে চলে গেল। শিশুকাল থেকেই সালাহউদ্দীন শুনে আসছিলেন প্রথম ক্রুসেডের সেই মর্মান্তিক পরাজয়গাথা। কেমন একটি অনুভূতি যেন নাড়িয়ে যাচ্ছিল তার শিশুমন।

ঐতিহাসিক আল-মাকরিজি বলেন, ‘সালাহউদ্দীনের বাল্যকাল গড়ে উঠেছিল তাসাউফের স্নিগ্ধ পরিবেশে। বাল্যকালেই তিনি কুরআনুল কারিম এবং ইমাম মালিক রহ:-এর মুয়াত্তা পাঠ করেছিলেন। কুরআন শরিফের তিলাওয়াত ছিল তার হৃদয়ের খোরাক। শায়েখ কুতবুদ্দীন আবুল মাআলী নিশাপুরী রহ:-এর কাছ থেকে সালাহউদ্দীন তাসাউফের সবক গ্রহণ করেন। সালাহউদ্দীন ছিলেন শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী। মিসরে অবস্থানকালে তিনি তথায় শাফেয়ি, মালিকি এবং হানাফি মাজহাবের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’আরব ইতিহাসবিদ ড. আলী সাল্লাবী তার ‘সুলতান সালাউদ্দিন আল আউয়ুবি’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘সালাহউদ্দীন মিসরের প্রথম খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অন্তত ৩০০ সুফি ওই খানকায় বসবাস করতেন, যারা ইলম ও তাকওয়ার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। সালাহউদ্দীন তাদেরকে খাদ্য, বস্ত্র প্রদান করতেন। যেকোনো অভিযানে তার সাথে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সুফি অংশগ্রহণ করতেন।’ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতিও রহ: একই মত প্রকাশ করেন।
ইবনে আসীর আল-কামিল ফিততারিখ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘সালাহউদ্দীন ছিলেন মসজিদ, মাদরাসা ও দরগাহগুলোর একনিষ্ঠ খাদিম। সুফিরা যখন মুরাকাবায় বসতেন, তাঁদের মুরাকাবা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাহউদ্দীন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইতেন।’

ইমাম জাহাবি রহ:-এর মতে- ‘সুলতান নুরউদ্দীন জংগী এবং সালাহউদ্দীন আইয়ুবী উভয়ের আকিদা ছিল সুন্নি-আশআরি।’
আল-মাকরিজি সালাহউদ্দীনের একান্ত সহচর বাহাউদ্দীন ইবনে শাদ্দাদের বরাত দিয়ে লিখেছেন- ‘সালাহউদ্দীনের সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্য ছিলেন সুলতানুল আউলিয়া সায়য়িদ আব্দুল কাদির জিলানী রহ:-এর মাদরাসা থেকে আগত এবং তার মুরিদান। কিছু সৈন্য ছিলেন ইমাম গাযালী রহ:-এর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা নিযামিয়ার ছাত্র। এরা বিভিন্ন মাজহাব এবং সুফি তরিকার অনুসারী ছিলেন। যখন সালাহউদ্দীন জেরুসালেম অভিযানের পরিকল্পনা করছিলেন, তখন তার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিখ্যাত ফকিহ ইবনে কুদামাহ হাম্বলি রহ:।’

তিন.
সালাহউদ্দীনের মূল শক্তি ছিল তার ঈমান ও তাকওয়া। দীর্ঘ ৮৮ বছর ক্রুসেডাররা বাইতুল মুকাদ্দাস কেবল নিজেদের শক্তি বলেই দখল করে রাখেনি। বিভক্ত মুসলিম বিশ্বের কিছু লোভী শাসককে নারী, মদ ও ঐশ্বর্যের টোপ দিয়ে অক্ষম করে রেখেছিল খ্রিষ্টানরা। কিন্তু এসব আবর্জনার একটি ছিটাও আল্লাহর ওলি সালাহউদ্দীনের পদতল স্পর্শ করতে পারেনি।
১১৭০ সালে দারুম অবরোধ ও বিজয়ের মাধ্যমে সালাহউদ্দীনের ফিলিস্তিন অভিযানের সূচনা হয়। ১১৭১ সালে নুরউদ্দীন জংগীর পরামর্শে সালাহউদ্দীন মিসরকে আব্বাসি খেলাফতের অধীনস্থ করেন। এরপর কেরাক ও মন্ট্রিয়াল অভিযানে বের হন। ১১৭৪ সালে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সুলতান নুরউদ্দীন জংগী রহ: শাহাদত বরণ করলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন সুলতান সালাহউদ্দীন। সে বছরই ক্রুসেডারদের দখলকৃত সিরিয়ার কিছু অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে তিনি বিজয় লাভ করেন। কুচক্রী মহল নুরউদ্দীন জংগীর বালকপুত্রকে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত করলেও জনগণ সালাহউদ্দীনকেই সুলতান বলে গ্রহণ করে।

কৌশলে জংগী বংশের সাথে সঙ্ঘাত এড়িয়ে মিসরে ফিরে এসে সালাহউদ্দীন মিসরের উন্নয়নে হাত দেন। ১১৭৭ সালে ক্রুসেডাররা যখন সিরিয়া পুনর্দখলে ব্যস্ত, তখন সালাহউদ্দীন আসকালানে অভিযান করে ক্রুসেডারদের ভিত কাঁপিয়ে দেন। এক দিকে তাকে সামলাতে হচ্ছিল ক্রুসেডারদের, অন্য দিকে দমিয়ে রাখতে হচ্ছিল লোভি শাসকদেরকে।
হাজারো প্রতিকূলতা মাড়িয়ে সালাহউদ্দীনের বাহিনী ১১৮২ সালে আইন জালুতে হাজির হয়। ওদিকে ক্রুসেড নেতা গাই অব লুসিগনান তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসে। কৌশলে তার পথ রুদ্ধ করে সালাহউদ্দীন ক্রুসেডারদেরকে দু’টি শিবিরে ভাগ করে ফেলেন। বিভক্ত ক্রুসেডাররা সহজেই পরাভূত হয়। সালাহউদ্দীনের বাহিনী সামনে এগিয়ে গিয়ে মুখামুখি হয় রেনাল্ড অব শালিটনের।

এই রেনাল্ড সর্বদা হজযাত্রীদের আক্রমণ করত এবং রাসূলুল্লাহ সা:-কে অকথ্য গালিগালাজ করত। সালাহউদ্দীন তাকে হত্যা করার শপথ করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থ সালাহউদ্দীন এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেননি। বড় বিজয়ের আগে এই ছোট ধাক্কাটি মুসলিম বাহিনীর জন্য একটি পরীক্ষা ছিল।

চার.
১১৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস। মাহে রমজানের শেষ রাত। দুনিয়া বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। সালাহউদ্দীন তার বাহিনী নিয়ে সারাটি রাত সালাতুত তারাবিহ ও কিয়ামুল লাইলে কাটিয়ে দিলেন। মালিকের দরবারে ফরিয়াদ করলেন- আল্লাহ, আজ যদি আমাদের জীবনের শেষ তারাবিহ হয়ে থাকে, তবে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে এটুকু প্রার্থনা করছি মাবুদ, বাইতুল মুকাদ্দাসকে তুমি জয় করে দাও।
৩০ রমজান সকালে গাই অব লুসিগনান এবং রেনাল্ড অব শালিটনের সম্মিলিত বাহিনীর বিপক্ষে চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় সালাহউদ্দীনের মুসলিম বাহিনী। সংঘটিত হয় সাহাবায়ে কেরাম-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ যুদ্ধ-জঙ্গে হিত্তিন। রক্তক্ষয়ী এ লড়াইয়ে সালাহউদ্দীনের বীরত্বগাথা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।

ইনি কি সত্যিই সালাহউদ্দীন ছিলেন? নাকি অবসর ভেঙে উঠে এসেছিলেন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ? ইতিহাস আজো দ্বিধান্বিত! বুকে দুর্মদ তেজ নিয়ে শাহাদতের সেহরা মাথায় পরে হাজার হাজার মুসলিম সৈন্য। অবশেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয় আসে। ক্রুসেড বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। গাইকে মুক্তি দেয়া হয়। শপথ অনুযায়ী রেনাল্ডকে নিজ হাতে হত্যা করেন সালাহউদ্দীন।

সামনেই জেরুসালেম। ২ অক্টোবর রাজা বেলিয়ানকে সহজেই অবরুদ্ধ করে মুসলিম বাহিনী। জেরুসালেমের রাজতোরণ উন্মোচিত করে বিজয়ীর বেশে মাসজিদুল আকসায় প্রবেশ করেন বীর মুজাহিদ সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। সেজদায় লুটিয়ে পড়েন মহান রবের সামনে। সমাপ্ত হয় দ্বিতীয় ক্রুসেড। আমাদের প্রথম কিবলা আমাদের হাতে ফিরে আসে।
পরাজিত সব খ্রিষ্টান রাজাদের বিনাবিচারে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন সালাহউদ্দীন। যুদ্ধের ময়দান ব্যতীত ইউরোপের কোনো রাজা (রেনাল্ড ব্যতীত), কোনো সামরিক-বেসামরিক বাহিনীকে তিনি হত্যা করেননি, করতেও দেননি।

পাঁচ.
৮৮ বছর আগে এই ক্রুসেডারদের হাতে ঝরা ৭০ হাজার মুসলমানের সমুদ্রসম রক্তের কোনো প্রতিশোধ নেননি সালাহউদ্দীন। রাহমাতুল্লিল আলামিন সা:-এর মক্কা বিজয়ের অনুপম আদর্শ তার হৃদয়পটে জ্বল জ্বল করছিল। ত্যাগ ও বদান্যতার দরুন তিনি শত্রুশিবিরেও সমাদ্রিত ছিলেন। আজো ইউরোপে তিনি ঞযব এৎবধঃ ঝধষধফরহ নামে প্রশংসিত।
১১৯১ সালে গাই অব লুসিগনান ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড দ্য লায়নহার্টকে সাথে নিয়ে তৃতীয় ক্রুসেড পরিচালনা করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সালাহউদ্দীন তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। বিজয় অভিযান সমাপ্ত হয়।
দামেস্কে ফিরে গিয়েই সালাহউদ্দীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্লান্ত দেহখানি আর সঙ্গ দিচ্ছে না।
বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের মতে- ‘কারী জাফর সালাহউদ্দীনের শিয়রের পাশে তিন দিন ধরে তিলাওয়াত করেছিলেন সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত। বারবার যে সালাহউদ্দীনকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন রাব্বুল আলামিন, সেই সালাহউদ্দীন তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। এবার গোলামকে মালিকের কাছে ফিরিয়ে নেয়ার পালা।’
১১৯৩ সালের ৪ মার্চ মুসলিম জাহানকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ইন্তেকাল করেন ইমামুল মুজাহিদিন সুলতানুল মুসলিমিন গাজী আবু নাসির সালাহউদ্দীন ইউসুফ আইয়ুবী।

ইবনে শাদ্দাদ বলেন- ‘মৃত্যুকালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল মোটে এক দিনার ও ৫০টি দিরহাম।’ দাফনের জন্য ঋণ করতে হয়েছিল। পরদিন ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক জানাজা শেষে দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে সমাহিত হন সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রহ:।
কিছুটা দূরে, হোমস শহরেই শায়িত আছেন তার পূর্বসূরি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা:। পরবর্তী দু’টি সপ্তাহ শোকার্ত মুসলমানরা তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে- উঠো সালাহউদ্দীন, উঠো!

সালাহউদ্দীনের জিহাদ আমাদেরকে দেখিয়েছে যে, আমরা যখন নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকি; আল্লাহর ওলিরা তখন মশগুল থাকেন আল্লাহর জিকরে। আর সেই ওলি-আউলিয়া যখন খানকা ছেড়ে ময়দানে এসে তরবারি হাতে নেন; তখন সারা বিশ্বের দর্শক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
আজ সালাহউদ্দীন নেই, তাই নব্য ক্রুসেডারদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মুসলিম উম্মাহ পালহীন নৌকার মতো অথৈ সাগরে দুলছে। নেতার অভাব আজ বড় বেশি অনুভূত হচ্ছে। হে মুসলিম নায়ক, হে সেনাপতি, হে সুলতানুল মুজাহিদিন, আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আর আপনার ত্যাগের মহিমা প্রজ্বলিত করুন আমাদের মৃত অন্তরে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও