রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পর্কে মুসলিম দায়িত্বশীলদের সম্মিলিত বিবৃতি

 

অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে র অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। দেশে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। এই সময় যেভাবে অনুষ্ঠানগুলি করা হচ্ছে এবং যেভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে, এটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থী শুধু নয়; ন্যায়ভিত্তিক নির্বাচনের স্পিরিটকে ধ্বংস করবে।
এই মুহূর্তে আমরা আমাদের মতামতকে প্রকাশ করা জরুরি বলে মনে করছি যে, বাবরি মসজিদের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট নয়। আদালত একথা মেনে নিয়েছে যে, কোন সাক্ষ্য মওজুদ নেই যে, রামমন্দির ভেঙে মসজিদ গড়া হয়েছিল। বাবরি মসজিদের তালা ভেঙে এর ভিতর মূর্তি রাখার কাজ হয়েছিল। আর এই মসজিদকে অপরাধজনকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তথাপি এই কথাগুলি মেনে নেওয়া সত্ত্বেও আদালত কেবল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে মসজিদের জায়গায় মন্দির গড়তে দিয়ে দেয়।
এজলাস এ কথার উপর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, ধর্মীয় স্থানসমূহ (বিশেষ ব্যবস্থাপনা) আইন-১৯৯১ থাকা সত্ত্বেও এবং সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব রায় এই বিষয়ে থাকা সত্ত্বেও আদালতগুলি অন্যান্য মসজিদের ওপর শুনানি করছে। এই কার্যকলাপ বিচার ব্যবস্থার ওপর দেশের ন্যায়পরায়ণ জনগণের আস্থা দুর্বল হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে রামমন্দিরের বিষয়ে অনুষ্ঠান দ্বন্দ্বমূলক হয়ে যায়। এবং সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ কোনো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য পছন্দনীয় সাব্যস্ত হতে পারে না।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মুসলমান ও জনসাধারণের কাছে আবেদন জানাই যে, এমতাবস্থায় দেশে শান্তি বজায় রাখতে সব রকমের চেষ্টা করতে হবে। মুসলমানদের উত্তেজিত করার চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় আমাদের কোনভাবেই হতাশাগ্রস্ত হলে চলবে না। ধৈর্য্য ও সবরকে শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে হবে। দেশে সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। ঘৃণা ও ভুল বোঝাবুঝিকে দূর করতে হবে। সততাকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। এটাই হল সমস্যার বাস্তবোচিত সমাধান। ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই দশার উপর আমল অব্যাহতভাবে ধীর চিত্তে করে যেতে হবে। আমরা আবেদন করছি যে, মিডিয়ায় দায়িত্বহীনভাবে বিবৃতি না দেওয়া।
সমাজমাধ্যমে অনাকাংখিত তর্ক-বিতর্ক, উত্তেজনাকর ভিডিও আপলোড না করা এবং এমন বিষয় ফরওয়ার্ড না করা, যাতে সাম্প্রদায়িক শক্তি এর দ্বারা ফায়দা হাসিল করতে পারে।

স্বাক্ষরকারীগণ:

মাওলানা মাহমুদ মাদানি: সভাপতি-জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ
জনাব সাইয়েদ সা’দাতুল্লাহ হোসাইনি: আমীর-জামাআতে ইসলামী হিন্দ
মাওলানা মহম্মদ আশরাফ: সভাপতি-অল ইন্ডিয়া উলামা ও মাশায়েখ বোর্ড
মাওলানা আহমদ ওয়ালি ফয়সাল রহমানি: ইমারাতে শরীয়াহ-বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ড
মাওলানা আসগর আলি ইমাম মাহদি সালাফি: আমীর-জমিয়তে আহলে হাদীস
মাওলানা তানভীর হাশমি: সভাপতি-জমিয়তে আহলে সুন্নাত, কর্ণাটক
জনাব আব্দুস সালাম: এডিটর-বার্তা ভারতী, মুঙ্গের
জনাব মহম্মদ সেলিম ইঞ্জিনিয়ার: জেনারেল সেক্রেটারি, ধার্মিক জনমোর্চা
জনাব মালিক মুতাসিম খান: সহ-সভাপতি, জামাআতে ইসলামী হিন্দ
জনাব ড. সাইয়েদ কাসেম রসূল ইলিয়াস: সভাপতি-ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া
জনাব মুজতবা ফারুখ: ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র
মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানি নদভী: ব্যাঙ্গালোর

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও