একই প্যানকার্ডে হাজারের বেশি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে, লাগাতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের লঙ্ঘন, ভুয়ো রিপোর্ট দাখিল, লাইসেন্সিং শর্তের চূড়ান্ত লঙ্ঘনের কারণে পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ক শাস্তির মুখে বলে একটি রিপোর্টে জানা গেছে। গত ৩১ জানুয়ারি বড় শাস্তির মুখে পড়ে পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ক। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, ২৯ ফেব্রুয়ারির পর পেটিএম পেমেন্ট ব্যাঙ্ক ক্রেতাদের থেকে টপ-আপ বাবদ কোনও ডিপোজিট নিতে পারবে না। ওয়ালেট, ফাস্টট্যাগের লিঙ্ক অ্যাকাউন্টও আর চলবে না। তবে কোনও ক্রেতার অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স থাকলে তা তিনি ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাছাড়া কোনও সুদ, ক্যাশব্যাক বা রিফান্ডও কাস্টমারকে ক্রেডিট করা যেতে পারে।
পেটিএম পেমেন্ট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সংক্রান্ত আরবিআই’র একাধিক নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। গত বছর থেকেই এ নিয়ে পেটিএম পেমেন্ট ব্যাঙ্ককে সতর্ক করেছিল আরবিআই। পেটিএম পেমেন্ট ব্যাঙ্কে কেউ নতুন করে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না বলে ২০২২’র ১১ মার্চ নির্দেশ জারি করেছিল আরবিআই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, পেটিএমের পেমেন্ট কোম্পানি তথা ওয়ান-৯৭ কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং পেটিম পেমেন্ট সার্ভিসকে ২৯ ফেব্রুয়ারির আগে যত শীঘ্র সম্ভব টার্মিনেট করে হবে। তবে পেটিএম’র ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা কাজ করবে যদি উপভোক্তার অন্য কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তা লিঙ্কড থাকে।
লাগাতার নিয়মভঙ্গের জেরেই এমন শাস্তির মুখে পড়ল পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ক। পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্কের কোন কোন কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ অনুযায়ী, ‘কোনওরকম সুদ, ক্যাশব্যাক বা রিফান্ড ছাড়া ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কোনও গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট, প্রিপেড মাধ্যম, ওয়ালেট, ফাস্টট্যা গ, এনসিএমসি কার্ডের (ন্যাশনাল কমন মোবিলিটি কার্ড) মতো ক্ষেত্রে আর ডিপোজিট বা ক্রেডিট লেনদেন বা টপ-আপ করতে দেওয়া হবে না।’ কোনওরকম নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই গ্রাহকরা নিজেদের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ফাস্টট্যাগ, ন্যাশনাল মোবিলিটি কার্ড সহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন। যতদিন তাঁদের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স আছে, ততদিন তাঁরা সেই টাকা অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন। টাকা তুলতে পারবেন বলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়। আরবিআই’র তরফে আরও জানানো হয় যে টাকা ট্রান্সফারের মতো উপরোক্ত পরিষেবাগুলি ছাড়া ২৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কোনও পরিষেবা প্রদান করতে পারবে না পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই), ইমিডিয়েট পেমেন্ট সার্ভিস (আইপিএস), আধার এনেবেলড পেমেন্ট সিস্টেমের (এইপিএস)’র মতো কোনও পরিষেবা দিতে পারবে না। অর্থাৎ ১ মার্চ থেকে পেটিম পেমেন্টস ব্যাঙ্কের ওয়ালেট, ফাস্টট্যাগ দিয়ে অনলাইনে টাকা দেওয়া যাবে না।
পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্কের পরিণতি যে কিছুটা এরকম হতে চলেছে, সেটার ইঙ্গিত মিলেছিল ২০২২ সালেই। সেই বছর মার্চে আরবিআই নির্দেশ দিয়েছিল যে আর কোনও গ্রাহক নিতে পারবে না পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ক। তারপর গত ৩১ জানুয়ারি পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ককে আরও বড় শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
কিন্তু ঠিক কী ভাবে বিষয়টি সামনে এল, তা জানা গেছে। একাটি সূত্রে জানা গেছে এক হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে একটিই পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর বা প্যান নম্বর লিঙ্ক করা ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ও অডিটররা যখন ভেরিফিকেশন করে, তখন ব্যাপক বেনিয়মের খোঁজ পাওয়া যায়। এরপরই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পেটিএমের উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকেও খবর দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, অর্থ মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকেও এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। রাজস্ব দপ্তরের সচিব সঞ্জয় মালহোত্রা জানিয়েছেন, পেটিএম পেমেন্ট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতি ও বেআইনি কার্যকলাপ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে ইডি। গণশক্তি