রাজ্য বাজেট (২০২৪-২৫) অনুযায়ী মিড-ডে মিল খাতে বাচ্চাদের খাবারের বরাদ্দের কোনো পরিবর্তন হয় নি। প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাপিছু বরাদ্দ ৫.৪৫ টাকা এবং আপার প্রাইমারিতে ৮.১৭ টাকা। বর্তমান চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে পুষ্টিখাতে এই বরাদ্দ এক প্রহসন মাত্র। খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বাচ্চাদের পুষ্টির যে মান বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে, তাও এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হচ্ছে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে চার মাস মিড ডে মিলের খাবারে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাজেট অনুযায়ী মিড-ডে মিল কর্মীদের সাম্মানিক প্রতি মাসে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৩ সালের পর এই সামান্য বৃদ্ধি অত্যন্ত হতাশাজনক। মূল্যবৃদ্ধির সূচকের নিরিখে বিচার করলেও ২০১৩ সালের ১৫০০ টাকা মজুরি অনুসারে এই বছর প্রকৃত মজুরি অর্থাৎ, যা বর্তমান সময়ে ২৫৯৮ টাকার সমতুল্য। যদিও বছরে ১০ মাসের মজুরি কাঠামোর কোনো পরিবর্তন বা সরকারি স্বীকৃতির কোনো পরিবর্তনের কথা উচ্চারিত হয় নি। এবছরের বাজেটে লক্ষ্মীর ভান্ডারে মাথাপিছু ১০০০ টাকা মাসিক ভাতার ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডারের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু বাজেটে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বাবদ যে পরিমাণ বরাদ্দ করা হয়েছে তার তুলনায় অধিকারমূলক খাতে এবং বিভিন্ন জরুরি পরিষেবায় বরাদ্দ অত্যন্ত কম।
মিড-ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চের উদ্যোগে মিল কর্মীদের সাম্প্রতিক যৌথ আন্দোলনে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং অবরোধ হয়। মিড ডে মিল কর্মীদের গত দেড় বছরের লাগাতার আন্দোলনের চাপে ১১ বছর পর রাজ্য সরকার এই সাম্মানিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো। যদিও এই সাম্মানিক তামিলনাড়ু, কেরালা, হিমাচল প্রদেশ সহ ভারতের বহু রাজ্যের তুলনায় অনেক কম। এদিকে কেন্দ্র সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রমাগত মিড-ডে মিল খাতে বরাদ্দ হ্রাস করেছে। আমরা অবিলম্বে মিড ডে মিল খাতে বাচ্চাদের বরাদ্দ এবং সরকারি স্বীকৃতি সহ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।
মিড-ডে রাজ্য সরকার যদি ভেবে থাকেন ৫০০ টাকা সাম্মানিক বৃদ্ধি করে এই ক্ষোভকে স্তিমিত করা যাবে তাহলে তারা ভুল করছেন। বাস্তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রশ্নে কি বিপুল পরিমাণ ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে সেটা তারা আন্দাজ করতে পারছেন না। এই সামান্য সাম্মানিক বৃদ্ধি আমরা কোনোভাবেই মানছি না। এই প্রশ্নে সরকার যদি অবিলম্বে সদর্থক ভূমিকা না নেয়, তার প্রতিক্রিয়ায় জনরোষ ধীরে ধীরে পরিস্ফুট হবে।