‘বেতাজ বাদশাহ’ একদিনেই হয়ে গেলেন ‘চুনোপুঁটি নেতা’!

 

আহমদ আবদুল্লাহ

শাহজাহান কথাটির অর্থ দুনিয়ার বাদশাহ। এটাই নাম ‘ সন্দেশখালির বাহুবলি নেতা’ শেখ শাহজাহানের। তাঁর নামটি এখন ভারত বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এমনকী বাংলা বিবিসি প্রভৃতি বিদেশি গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, তাঁর (শেখ শাহজাহান) নামটি বিখ্যাত করার পিছনে রয়েছে দু-একটি গণমাধ্যম। বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেল। তারা দিনরাত যেভাবে ‘শাহজাহান শাহজাহান’ করে যাচ্ছিল, অনেকে বলছেন তাতে কান প্রায় ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, স¨েশখালির শাহজাহান হয়তো বা মুঘল বাদশাহ শাহজাহানের সমতুল্য হয়ে উঠেছে! তাকে বলা হচ্ছিল, সে নাকি ‘বেতাজ বাদশাহ’। অর্থাৎ কি না মুকুটবিহীন সম্রাট। কে ছিল এই ভদ্রলোক কিংবা অভদ্রলোক? তিনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষের পাশাপাশি ছিলেন সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি। ইডির সার্চ টিমের উপর হামলা হওয়ার পরই শাহজাহান হয়ে ওঠেন ‘শাহ জাহান’। তার আগে বাংলার মিডিয়া তার সন্ধান খুব একটা পায়নি। শহরকেন্দ্রিক সাংবাদিকতায় আমরা যে এখনও গ্রামবাংলার বহু জায়গার খবর রাখি না, তার এক নজির হচ্ছে সন্দেশখালি।
এ কথা ঠিক, সন্দেশখালিতে ‘বেতাজ বাদশাহ’ তার উজির-নাজিরদের নিয়ে ওই এলাকাটিতে জুলুমবাজির এক স্বর্গ গড়ে তুলেছিল। ইডির উপর হামলা একদিক থেকে সন্দেশখালির সাধারণ মানুষের জন্য শাপে বর হয়েছে। কথিত ওই বেতাজ বাদশাহর নেতাগিরি ও জুলুমবাজির মুখোশ খুলে দিয়েছে। আরও আন¨ের কথা, বাদশাহের প্রধান উজির বলে কথিত আমির আলি গাজি গ্রেফতার হয়েছে এবং সেই উজির এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে উজির তো একজন থাকে না, কয়েকজন উজিরের সঙ্গে থাকে নাজির-রাও। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে উত্তম সরদার, শিবু হাজরা। ক্যামেরায় বক্তব্য রাখা গ্রামবাসী বিশেষ করে মহিলাদের মতে এরা ছিল শাহজাহানের উজির ও নাজির। তবে আখেরে এদের স্বর্গবাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গবাসী নিশ্চয়ই ঈশ্বর, আল্লাহ্ যে নামেই হোক না কেন অবশ্যই প্রার্থনা করবে। কারণ, শাহজাহানের এই দু’জন উজির-নাজির প্রথমেই গ্রেফতার না হলে একটি মহল চেষ্টা করছিল সমগ্র বিষয়টিকে একটি সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার জন্য। উত্তম ও শিবু গ্রেফতার হয়ে বিষয়টিকে যে একটি অসাম্প্রদায়িক-সেক্যুলার জুলুমবাজিতে পরিণত করেছে তাতে বি¨ুমাত্র স¨েহ নেই। তাই একটি মুসলিম সংগঠনের নেতা বললেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতার অনুসরণে অবশ্যই বলতে হবে ‘বেঁচে থাক উত্তম-শিবু, চিরজীবী হয়ে’। ধরা পড়ে তোমরা বর্তমান ভারতে সহজলভ্য অথচ বিরাট বিপদ থেকে অন্তত বাংলাকে বাঁচিয়ে দিয়েছ।
এই ধরনের বহু শাহজাহান, উত্তম-শিবু-গাজি গ্যাং যে দেশে রয়েছে তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কেউ লুঠছে স¨েশখালি, আবার কেউ খালি করছে দেশকে। বিজয় মাল্য, ললিত মোদি, নীরব মোদির কথা আমরা ভুলে যাইনি। এরা অনেক সময়ই সরকারের প্রশ্রয় পায়, প্রশ্রয় পায় ব্যাঙ্কের, সেবির। আদানি গ্রুপও যে প্রশ্রয় ও সমর্থন পাচ্ছে, তাতে তো কারও কোনও স¨েহ নেই।
সে যাই হোক, রাজকীয় চালে শাহজাহান আদালতে প্রবেশ করেছে। সে যে জুলুম, তোলাবাজি, জমি দখল করেছে, মানুষের হক নষ্ট করেছে তার বিচার অবশ্যই হতে হবে, উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এই দুর্বৃত্তদের পাওনা। এদের সমাজ যেন সম্পূর্ণভাবে বয়কট করে। তবে এই বেতাজ বাদশাহ সম্পর্কে টিভি-৯ চ্যানেলটি একটি শধ ব্যবহার করেছে। আর তা হল ‘চুনোপুঁটি নেতা’। এটাই শাহজাহান গ্যাংয়ের আসল শিরোপা। তৃণমূল তাকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তৃণমূল আরও বলেছে, আরও অনেক তাবড় তাবড় নেতা মুর্শিদাবাদ, মালদহে অবাধে তোলাবাজি করেছে। সারদা কেলেঙ্কারিতেও তাদের নাম রয়েছে। কিন্তু দেশের শাসক দলে যোগ দিয়ে বাংলায় তাদের ঝান্ডা কাঁধে নেওয়ায় ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স টুঁ শধটি করছে না। যত দোষ দেশের বিরোধী দলসমূহের! হয়তো এজন্যই বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার (সিকা¨র) বড় দুঃখ নিয়ে বলেছিলেন, ‘সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!’ (আহমদ হাসান ইমরানের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া)

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও