মায়ের দাফন হয়েছে পবিত্র নগরী মক্কায়, বেদনার মাঝে শান্তি সন্তানদের

সৌদি আরবে এ বছর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পালিত হয়েছে পবিত্র হজ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজ পালন করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক হাজার মানুষের। তাঁদের বেশির ভাগই মিসরীয়। এই প্রাণহানির জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিবছর যেসব মিসরীয় সৌদি আরবে হজ পালন করতে যান, তাঁদের অনেকেই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। আর্থিকভাবেও সচ্ছল নন। হজ পালনের জন্য তাঁরা সারাজীবন ধরে সঞ্চয় করেন। যেমন ৭০ বছর বয়সী এফেন্দিয়া। পাঁচ সন্তানের এই জননী মিসরের পূর্বাঞ্চলীয় মেনোউফিয়া প্রদেশে বসবাস করতেন।

এফেন্দিয়ার ছোট ছেলে সায়েদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল এই প্রতিবেদকের। তাঁর মা নাকি নিজের গয়না বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে হজে গিয়েছিলেন। তবে বেঁচে ফিরতে পারেননি। হজ পালন করা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। এমন সব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সায়েদ। এফেন্দিয়া বিধবা ছিলেন। তিনি কিন্তু হজ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যাননি। সাধারণ পর্যটক ভিসা করেছিলেন। এ বছর এফেন্দিয়ার মতো লাখ লাখ মানুষ এই ভিসা নিয়েই হজ পালন করতে গেছেন। সৌদি আইনে এটা অবৈধ। তবে হজ ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল। অনেক সময় খরচের পরিমাণটাও পর্যটক ভিসার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। একজন আরব কূটনীতিকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এ বছর হজে মারা যাওয়া ৬৫৮ মিসরীয়র মধ্যে ৬৩০ জনই ছিলেন অনিবন্ধিত।

এফেন্দিয়ার বড় ছেলে তারিক বলছিলেন, ‘আরাফাতের ময়দান থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে এফেন্দিয়াসহ অন্যদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাকি পথটা তাঁদের হেঁটে যেতে হয়েছিল। আমি যখনই তাঁকে (এফেন্দিয়া) ভিডিও কল করছিলাম, দেখছিলাম তিনি মাথায় পানি ঢালছেন। এত গরম তিনি সহ্য করতে পারেননি। শেষবার যখন কল করেছিলাম, তাঁকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল।’ হজযাত্রীরা সাধারণত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে থাকেন। পবিত্র স্থানগুলোয় যাতায়াতের জন্য তাঁদের বাস সরবরাহ করা হয়। থাকে চিকিৎসার ব্যবস্থাও। তারিক বলেন, হজ ভিসা নিয়ে না গেলে এসব সুবিধার কিছুই পাওয়া যায় না। তাঁদের যেন একেবারে পরিত্যাগ করা হয়। তাঁর মাসহ অন্যরা প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে বিছানার চাদর দিয়ে তাঁবু বানিয়ে ছিলেন।

মিসর সরকার জানিয়েছে, এবার দেশটি থেকে হজ করতে গিয়ে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের অনেকেই হজ ভিসা নিয়ে যাননি বা নিবন্ধিত নন। এমন অবৈধভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান মিসরীয়দের হজে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি।

এফেন্দির বড় মেয়ের নাম মানাল। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর চোখে পানি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘মৃত্যুর কিছু সময় আগে মা আমার ভাইকে ফোন দিয়েছিলেন। বলছিলেন, তাঁর মনে হচ্ছে, শরীর থেকে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তখন যদি আমি তাঁর সঙ্গে থাকতে পারতাম।’ এফেন্দিয়া যখন জীবনের শেষ শ্বাসগুলো নিচ্ছিলেন, তখন তিনি শুয়ে ছিলেন একটি সড়কের এক কোনায়। মায়ের এমন মৃত্যু তাঁর সন্তানদের জন্য চরম বেদনার। তবে তাঁরা এটা ভেবে কিছুটা শান্তি পাচ্ছেন যে মায়ের দাফন হয়েছে পবিত্র নগরী মক্কায়। মানাল বলছিলেন, তিনি (এফেন্দিয়া) চাইতেন যেন মক্কায় মারা যান এবং সেখানে দাফন হয়। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সৌজন্যে- বিবিসি, প্রথম আলো।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও