চিকিৎসক পড়ুয়ার ছবি ও নাম প্রকাশ নিয়ে ক্ষুব্ধ সুপ্রিমকোর্ট, জেনে নিন এসব কেন শেয়ার করা উচিত নয়?

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আরজি কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের শিকার হওয়া চিকিৎসক পড়ুয়ার নাম, ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মহিলা চিকিৎসকের পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা ব্যাপক ক্ষোভ ও আইনি পদক্ষেপের জন্ম দিয়েছে। এই ধরনের প্রকাশ নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও, নির্যাতিরার নাম এবং ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট সমস্ত সংবাদ ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে চিকিৎসক পড়ুয়ার নাম, ছবি এবং ভিডিও মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এনিয়ে দুই আইনজীবী মৃত ব্যক্তির নাম এবং পরিচয় প্রকাশের বিরুদ্ধে আদালতে যান৷ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের একটি বেঞ্চ এই আদেশটি দিয়েছেন। আদালত আদেশ দিয়েছে, আমরা নির্দেশ দিচ্ছি যে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে মৃত চিকিৎসকের নাম এবং ফটো ভিডিওগুলির সমস্ত রেফারেন্স অবিলম্বে মুছে ফেলতে হবে।

আবেদনকারীরা উল্লেখ করেছেন, মৃত ব্যক্তির লাশের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছিল এবং এটি এই আদালতের নিপুন সাক্সেনার রায়ের লঙ্ঘন। সুপ্রিমকোর্ট উল্লেখ করেছে, এটি সেই রায়ে নির্দেশ দিয়েছে যে ধর্ষণের শিকারদের পরিচয় অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং মিডিয়া এটি প্রকাশ করতে পারবে না। বেঞ্চ আবেদনকারীর আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এই বিষয়ে কী বলে।” আবেদনকারীর আইনজীবী উত্তর দিয়েছেন, “পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না।” আদালত তারপরে নিউজ আউটলেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে নাম, ছবি এবং ভিডিও সহ ভিকটিমদের বিশদ বিবরণ নামিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেই।

ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করার বিষয়ে আইন কি বলে?

দ্য ইকোনমিকস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার কারো পরিচয় প্রকাশ করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ২০২৩ এই ধরনের প্রকাশকে অপরাধী করে, জরিমানা এবং দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য। এই নিয়মের ব্যতিক্রমগুলি সীমিত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, শুধুমাত্র ভুক্তভোগী বা তাদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে এবং শুধুমাত্র অনুমোদিত ওয়েলফেয়ার ইন্সটিটিউশনগুলির অনুমতি নিয়ে প্রকাশের অনুমতি দেয়।

ধর্ষণের শিকারদের সুরক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশিকা

যৌন নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের পরিচয় রক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্ট কঠোর নির্দেশিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া এবং অন্যদের এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করা থেকে নিষিদ্ধ করা যা ভিকটিমকে শনাক্ত করতে পারে। আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, এই ধরনের মামলা সম্পর্কিত সমস্ত নথি সিল করা কভারে রাখা হবে এবং শুধুমাত্র আদালতে অ্যাক্সেসযোগ্য হবে। নির্দেশিকাগুলি ক্ষতিগ্রস্থদের আরও ক্ষতি থেকে রক্ষা করার গুরুত্বের উপর জোর দেয়, উল্লেখ করে যে তারা প্রায়শই সামাজিক বর্জন এবং বৈষম্যের সম্মুখীন হয়।

ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির পরিচয় কেন সুরক্ষিত?

সুপ্রিম কোর্ট যৌন নিপীড়নের শিকারদের মুখোমুখি হওয়া সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেছে। উল্লেখ করেছে যে তাদের প্রায়শই ‘অস্পৃশ্য’ হিসাবে আচরণ করা হয় এবং তাদের সম্প্রদায়ের দ্বারা বঞ্চিত করা হয়। নিপুন সাক্সেনা মামলায় আদালতের ২০১৮ সালের রায় ভিকটিমদের আরও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং এই ধরনের অপরাধের রিপোর্টিংকে উৎসাহিত করার জন্য গোপনীয়তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও