এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন আজ ৬০১ দিনে পড়লো, কবে কথা রাখবে সরকার?

 

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিএইচজি বাংলা: একদিন দুইদিন করতে করতে শুক্রবার ৬০০ দিনে পড়ে এসএসসি নবম থেকে দ্বাদশ পাস আন্দোলনরত চাকরি প্রার্থীদের ধর্ণা। আজ শনিবার ফের একদিন বেড়ে ৬০১ দিন হল। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্তরা ধীরে ধীরে ধরা পড়ুক, কিন্তু তাদের নিয়োগ যেন দ্রুত হয়। কেননা দীর্ঘদিন ঘর বাড়ি ছেড়ে পথে পড়ে আছেন।

ঈদ,পুজো গেছে, ওরা ঘরে ফেরেনি। তাদের প্রতিজ্ঞা, ন্যায্য চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। তাই ঘর-স্বজন ছেড়ে দিনের পর দিন রাস্তায় বসে রয়েছেন তাঁরা। চড়া রোদ হোক বা অঝোর ধারায় বৃষ্টি— প্রকৃতির কোনও রোষই তাঁদের টলাতে পারেনি।
চাকরি প্রার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে বিভিন্ন বক্তব্য লেখা রয়েছে। স্লোগান উঠছে, ‘নিয়োগ চাই, নিয়োগ চাই’ বলে। কলকাতার ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে রয়েছেন অসংখ্য চাকরি প্রার্থী। তারা সরকারের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পেলেও এখনো নিয়োগ পাননি। তাই প্রত্যেকের চোখেমুখে হতাশার ছবি। কারও চোখের কোণে জমছে যন্ত্রণার জল। শরীরে ক্লান্তি নামছে কারও কারও। এতকিছুর পরেও হকের চাকরির জন্য মাটি কামড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলার চাকরি প্রার্থীরা। যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। অনেকে বলছেন, ঢের ঢের আন্দোলন হয়েছে, পাস করে, মেধা তালিকায় থেকেও চাকরির না পাওয়ার এত দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন বাংলার ইতিহাসে হয়নি।
কিন্তু ৬০০ দিন তো হয়ে গেল। আর কত দিন পথে থাকবেন বাংলার এইসব মানুষ? সুদীপ মণ্ডল নামে এক চাকরিপ্রার্থী গণমাধ্যমকে জানান, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবেই!’’
এদিন গোটা রাজ্যের বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। মালদহ, মূর্শিদাবাদ, নদীয়া,কোচবিহার, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও চাকরি প্রার্থীরা এসেছিলেন। আন্দোলনকারীদের নেতা শহিদুল্লাহ জানান, আমাদের আন্দোলন এখন আর গান্ধিমূর্তির এই চৌহদ্দির মধ্যে নেই। আমরা একটা অসম লড়াই শুরু করেছিলাম, ৫০,১০০,২০০ জন নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলাম শক্তিশালী একটা অপশক্তির বিরুদ্ধে। এখন গোটা বাংলা জুড়ে, ভারতবর্ষ জুড়ে এই আন্দোলনের আবেগ আন্দোলনের যৌক্তিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।’
চাকরি প্রার্থীরা বলছেন, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক সদর্থকও হয়। কিন্তু আজো চাকরি হয়নি। এই আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের বাধা, ঝড় বৃষ্টি, শীত গ্রীষ্ম সব উপেক্ষা করতে হয়েছে। হাতে টাকা না থাকলেও ধার করে আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে হয়েছে। একদিকে রাজপথের আন্দোলন অন্যদিকে আইনি লড়াই, চাকরি প্রার্থীরা এক ইঞ্চি মাটি ছাড়তে নারাজ। তাদের স্পষ্ট দাবি, মেধা তালিকায় থাকা সবার চাকরি দিতে হবে, দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে ঢোকাতে হবে।
তবে আন্দোলনের ৬০০ দিনে বহু রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী, নাগরিক সমাজের লোক মঞ্চে এসেছিলেন। মীরাতুন নাহার, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট জনরাও যান চাকরি প্রার্থীদের ধর্ণা মঞ্চে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইএম সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, বিজেপি নেতা সজল ঘোষ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এসেছিলেন।আন্দোলনকে সংহতী জানিয়ে অবস্থান মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও