আত্মার প্রশান্তি লাভে কোরআনের ভূমিকা

আলেমা হাবিবা আক্তার
আত্মার প্রশান্তি লাভে কোরআনের ভূমিকা

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নুর বা জ্যোতি আল্লাহ তাঁর বাণী কোরআনে রেখেছেন। তাই কোরআনই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী গ্রন্থ। কোরআনের এই প্রভাব তাঁর ভাব, ভাষা ও অন্তর্নিহিত নিগূঢ় রহস্যের কারণে। যে ব্যক্তি কোরআনকে যত বেশি ধারণ করবে, সে তত বেশি আলো লাভ করবে। কোরআনের এই অন্তর্নিহিত নিগূঢ় রহস্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি আমি এই কোরআন পর্বতের ওপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি তাকে আল্লাহর ভয়ে বিনীত এবং বিদীর্ণ দেখতে। আমি এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ২১)

কোরআনের ধারক হয় যারা : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষরাই আল্লাহর বাণীর ধারক হয়ে থাকে। যেমন কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এরাই তারা নবীদের মধ্যে যাদের আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, আদমের বংশ থেকে এবং যাদের আমি নুহের সঙ্গে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম এবং ইবরাহিম ও ইসমাইলের বংশোদ্ভূত ও যাদের আমি পথনির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম; তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত কান্না করতে করতে।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৫৮)

সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.) লেখেন, নবী-রাসুলদের পাশাপাশি আল্লাহ তাদেরও তাঁর বাণীর (কোরআনের) ধারক বানাবেন, যাদের ভেতর আয়াতের শেষাংশে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকবে। অর্থাৎ যাদের মধ্যে আল্লাহভীতি প্রবল, যারা আল্লাহর ব্যাপারে সূক্ষ্ম অনুভূতির অধিকারী, কোরআন তিলাওয়াত করলে যারা প্রকম্পিত হয়, তাদের ভেতর সৃষ্ট অনুভূতি প্রকাশে শব্দমালা যথেষ্ট হয় না। ফলে তারা অশ্রুবর্ষণ করে এবং কান্নারত অবস্থায় সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। (ফি দিলালির কোরআন : ৪/২৩১৪)

মুমিনের জীবনে কোরআনের প্রভাব

মুমিনের যাপিত জীবনে কোরআনের প্রভাব নানাভাবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। যার কয়েকটি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

১. হৃদয় বিগলিত হওয়া : কোরআন সর্বপ্রথম মুমিনের হৃদয়কে প্রভাবিত করে। যখন সে কোরআন শ্রবণ করে, তখন তাঁর হৃদয় বিগলিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের কাছে পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২)

২. আত্মার প্রশান্তি লাভ : কোনো সন্দেহ নেই কোরআন তিলাওয়াত আল্লাহর উত্তম জিকির বা স্মরণ। কোরআন তিলাওয়াত মুমিনের হৃদয়কে প্রশান্ত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)

৩. সিজদায় লুটিয়ে পড়া : মুমিন যখন আল্লাহর বাণী কোরআন তিলাওয়াত করে বা তা শ্রবণ করে, তারা শ্রদ্ধাবনত হয়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেবল তারাই আমার নিদর্শনাবলি বিশ্বাস করে, যারা তার দ্বারা উপদিষ্ট হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আর তারা অহংকার করে না।’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১৫)

৪. গা রোমাঞ্চিত হওয়া : আল্লাহর কোরআন পাঠ করলে মুমিনের গা রোমাঞ্চিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণীসংবলিত কিতাব, যা সুসামঞ্জস্য এবং যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত করা হয়। এতে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের গা রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর পথনির্দেশ, তিনি তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করেন। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ২৩)

৫. কান্না করা : মুমিন কোরআন তিলাওয়াত করলে তাদের হৃদয় বিগলিত হয় এবং তারা কান্না করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন তারা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চক্ষু অশ্রু বিগলিত দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদের সাক্ষ্যবহদের তালিকাভুক্ত কোরো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮৩)

৬. আধার থেকে আলোর পথে : কোরআন মুমিনদের আধার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এটা দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদের সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১৬)

৭. অন্তরের আরোগ্য লাভ : কোরআন মুমিনের রোগ-ব্যধি, সংশয় ও দ্বিধা দূর করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৭)

কোরআন দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া নিন্দনীয় : যারা কোরআন থেকে বিমুখ হয়ে থাকে এবং কোরআন যাদের অন্তরকে প্রভাবিত করতে পারে না, তারা হতভাগ্য। পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, তুমি যার প্রতি আমাদের আহ্বান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণ-আচ্ছাদিত, আমাদের কানে আছে বধিরতা এবং তোমরা ও আমাদের মধ্যে আছে অন্তরাল; সুতরাং তুমি তোমার কাজ করো এবং আমরা আমাদের কাজ করি।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা, আয়াত : ৫)

আল্লাহ সবাইকে কোরআন দ্বারা উপকৃত করুন। আমিন (কালের কণ্ঠ অনলাইন)

 

 

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও