বাইডেনের উপদেশ মোদীকে

 

গণতন্ত্রের জননী বলে যে দেশকে বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্তগুলিও মানতে নারাজ। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে তিনি রাজা-মহারাজার মতো শাসন করবেন। শেষ কথা বা শেষ সিদ্ধান্ত তাঁরই। তাতে কোনও নড়চড় হবার নয়। তিনি একাই বলবেন, শুনতে হবে সকলকে। তাঁকে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। তাঁর সমালোচনা বা বিরোধিতা ফৌজদারি অপরাধ। পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেবে। এহেন স্বৈরাচারী রাজকীয়তা গণতন্ত্রের নামে স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া কিছুই নয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকে কোনোদিন তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের কোনও জবাব তিনি কোনোদিন দেননি। বলা ভালো কোনও প্রশ্ন করার সুযোগও দেননি। দু’-একবার পেটোয়া সাংবাদিক ডেকে সাক্ষাৎকারের নামে নিজে বাছাই করা পছন্দের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মাত্র। অর্থাৎ তিনি নিজেকে সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে মনে করেন। তাঁকে প্রশ্ন করার অধিকার কোনও ভারতবাসীর থাকতে পারে না। তিনি যা বলবেন বা করবেন সকলকে অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করতে হবে আর মোদী মোদী জয়ধ্বনি দিতে হবে। অর্থাৎ দেশের তিনি গুরু, দেশবাসী তাঁর অনুগত ভক্ত।

এহেন ‘দেশীয় গুরু’ এখন ‘বিশ্বগুরু’ হতে চাইছেন। তাই নিজের ভাবনা-আচরণ অন্য দেশের উপরও চাপিয়ে দেবার দুঃসাহস দেখাতে শুরু করেছেন। জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের আগে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের সঙ্গে মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বের সব দেশেই এধরনের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করা রীতি। কিন্তু মোদী যেহেতু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন না তাই বাইডেনকেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে দেননি। বাইডেনের সঙ্গে আসা মার্কিন সাংবাদিকরা প্রবল চাপ সৃষ্টি করলেও মোদী সরকার কিছুতেই কথা বলার অনুমতি দেয়নি। মোদী নিজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন না, বাইডেন বললে তাঁকেও বলতে হবে তাই তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে দেননি এটা পুরো সত্য নয়। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাইডেন এমন কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেছেন যা প্রকাশ্যে এলে মোদীর অস্বস্তি বাড়বে। মোদী চাননি সে সব ফাঁস হয়ে যাক। কিন্তু তিনি চাইলেই যে বাইডেন মুখ বন্ধ করবেন তা কিন্তু নয়।
ভারত ছেড়ে ভিয়েতনামের মাটিতে পা দিয়েই মার্কিন রাষ্ট্রপতি রীতিমতো ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন মোদীকে দেওয়া তার পরামর্শের কথা। বুঝিয়েছেন উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সহিষ্ণুতা, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের গুরুত্বের কথা। মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দেশের জন্য মানবাধিকারের গুরুত্বকে সম্মান করা, নাগরিক সংগঠনগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেওয়া কতটা জরুরি। মোদী জমানায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও কাঠামোকে নিরন্তর দুর্বল করা, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে স্বৈরাচারী ঢঙের আচরণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাইডেনের এমন উপদেশ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু গুরুর কাছে এটা যে কতটা অসহনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাইডেনের এই উপদেশগুলি মোটেই মনগড়া নয়। ভারতের বাস্তব চিত্র এমনটাই। মার্কিন বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সময়ে মোদীর ভারতে এসব ঘটনার জন্য বিস্তর সমালোচনা ও নিন্দা করেছে। তাতে মোদী সরকারের ক্ষোভও চাপা থাকেনি। মোদী প্রবল ক্ষুব্ধ ছিলেন গত জুন মাসে মার্কিন সফরের সময় তাঁকে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হতে বাধ্য করায়। মার্কিন রীতি অনুযায়ী যে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন হয়। মোদী তাতে আপত্তি জানালেও বাধ্য হন দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিতে। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে যে তাঁর কালঘাম ছুটেছিল সেটা সকলেরই জানা। এবার দিল্লিতে বাইডেনকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে না দিয়ে তিনি বদলা নিয়েছেন। কিন্তু অস্বস্তি থেকে বাঁচতে পারলেন না। সুত্র: গণশক্তি

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও