মহিলা সংরক্ষণ বিল দীর্ঘদিন যে ফেলে রাখা হয়েছিল তার মূল দায় তো মোদী সরকারের উপরেই বর্তায়!

বিজেপির প্রচারযন্ত্র আপনাকে বলতে চাইছে যে, মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিষয়টা সংসদে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছিল, এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীই তা বাস্তবায়িত করলেন। কিন্তু ঐ প্রচারকরা যেটা বলছে না, তা হল – ২০১০ সালে বিলটা রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর থেকে গতকাল লোকসভায় পাশ হওয়ার মধ্যেকার বেশিরভাগ সময়টাই মোদী সরকার ক্ষমতায় ছিল। ২০১৪ থেকে আজ ন’টা বছর অতিক্রান্ত মোদি সরকারের। দীর্ঘদিন যে ফেলে রাখা হয়েছিল বলা হচ্ছে তার মূল দায় তো মোদী সরকারের উপরেই বর্তায়।

প্রচারকরা আপনাকে এটাও বলবে না যে, বিলটা পাশ হলেও তা এমন ছকে তৈরি করা হয়েছে যা বাস্তবে প্রয়োগ হতে অনির্দিষ্টকাল দেরী হবে।

১৯৮০ -র দশকের প্রথমদিকে একটি প্রাইভেট মেম্বার বিল হিসাবে প্রথম পেশ করেন প্রমীলা দন্ডবতে, তারপর থেকে এই মহিলা সংরক্ষণ বিলের চার দশকব্যাপী সংসদীয় ইতিহাস রয়েছে। বিলটা পাশ হওয়া পর্যন্ত এই পুরো সময়কালে প্রচুর আলোচনা ও বিতর্ক চলেছে। ফলত এর সাম্প্রতিকতম সংস্করণটি অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উন্নত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এর রূপরেখা অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে বানানো হয়েছে এবং কার্যকর করার কোনো দিশা নেই।

গতকাল লোকসভায় যে বিলটা পাশ করানো হল, তাতে যে জ্বলন্ত ফাঁকফোকর ও দ্বন্দ্বগুলো রয়ে গেছে তার মধ্যে প্রধান তিনটে হল:
i) এটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও অনির্দিষ্টকালীন বিলম্ব, কারণ এটার প্রয়োগ এমন দুটো শর্তে বাঁধা আছে যেগুলো বিরাট বড় ও সময়সাপেক্ষ কর্মযজ্ঞ — জনগণনা ও ডিলিমিটেশন অর্থাৎ সীমানা পুনর্বিন্যাস। এটা সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন ও অযৌক্তিক;
ii) সমাজের সব অংশের মহিলা, বিশেষত অনেক কম সংখ্যক প্রতিনিধিত্ব থাকা ওবিসি ও অন্যান্য বঞ্চিত সম্প্রদায়ের মহিলাদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব সংসদে নিশ্চিত করার কোনো গরজ এই বিলে নেই;
iii) রাজ্যসভা ও দুই সংসদীয় কক্ষবিশিষ্ট রাজ্যগুলির বিধান পরিষদকে মহিলা সংরক্ষণ বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে দেশের আইনকে কেন এমন বিভ্রান্তিকর ভাষায় প্রকাশ করা হচ্ছে? মহিলা সংরক্ষণকে নারীশক্তি বন্দনা বলে ডাকা হচ্ছে! অথচ বাস্তবে যা করা হচ্ছে তা হল নারীশক্তির প্রতি প্রতারণা। অত্যন্ত শ্রুতিকটু লাগে যখন নির্মলা সীতারামণ বিজেপির মহিলা সাংসদদের ‘নরেন্দ্র মোদীর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত’ বলে সার্টিফিকেট দেন এবং বলেন যে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মূ নাকি একজন ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদিবাসী মহিলা, অথচ তাকেই কিনা ‘নারী সশক্তিকরণের ঐতিহাসিক মুহূর্তে’ দৃষ্টিকটুভাবে সংসদের বাইরে রেখে দেওয়া হল!

দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও