ধস-হড়পা বানে হিমাচলে মৃত ২২, উত্তরাখণ্ডেও চার

বাড়ি থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরে পড়ে রয়েছে দেহ। মেয়েটির বয়স বারো বা চোদ্দ। বাড়ির আর পাঁচজন ভেসে গিয়েছেন হড়পা বানে। হিমাচল প্রদেশের মান্ডি-কাটোলা-পরাশর সড়কের উপর বাঘি নালার কাছে শুক্রবার রাতে পাওয়া যায় ওই নাবালিকার দেহ। শনিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, হড়পা বানে, ধসে হিমাচল প্রদেশে কমপক্ষে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একই পরিবারের আটজন রয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। উদ্ধার কাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে এদিন চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

উত্তর ভারতজুড়েই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। একটানা ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডে প্রবল বর্ষণে হড়পা বান এবং ধসের জেরে প্রচুর ঘর-বাড়ি ভেসে গিয়েছে। মান্ডি, কাংরা এবং চাম্বা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। রাজ্যজুড়ে ৩৬টি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মান্ডিতে মানালি-চণ্ডীগড় জাতীয় সড়ক, শোগিতে সিমলা-চণ্ডীগড় জাতীয় সড়ক সহ ৭৪৩টি সড়কপথে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। একাধিক সড়কপথ ভেঙে গিয়েছে ধসে। শুধু মান্ডিতেই মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। যাঁরা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন, তাঁরাও মান্ডিরই বাসিন্দা। গোহারের কাশান গ্রামে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে উদ্ধারকাজ চালিয়ে রাজ্য পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একই পরিবারের আটজনের দেহ উদ্ধার করেছে। ধসের জেরে বাড়ি ভেঙে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গিয়ে প্রাণ হারান তাঁরা।

হিমাচলের কাংড়ায় ব্রিটিশ আমলে তৈরি সেতুর একাংশ এদিন সকালে ভেঙে পড়েছে। এক ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে চলা চাক্কি নদী ফুঁসছে। জলস্রোত ক্রমশই বাড়ছে। আর দু’টি পিলার ভেঙে সেতুর একাংশ কার্যত ঝুলছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা ভেঙে পড়ল জলের মধ্যে। এই সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগীন্দরনগর এবং পাঠানকোটের মধ্যে ট্রেন পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটেছে। চাম্বাতে বাড়ি ভেঙে পড়ে একই পরিবারের তিন সদস্য প্রাণ হারান। এদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ চওয়ারি মহকুমার বানেট গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বাঘি নালার কাছে হড়পা বানের পর বহু পরিবার নিরাপদ জায়গায় যেতে পারলেও স্থানীয় আরও কিছু পরিবারের সদস্য ধসের জেরে চাপা পড়ে প্রাণ হারান।

ধস এবং হড়পা বানে একাধিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বালহ, সদর, থুনাঙ, মান্ডি এবং লামাথাচে জলমগ্ন বাড়িতেই আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন একাধিক। এদিন রাত পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এদিন মান্ডিতে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কাংরায় এবং লাহরে বৃষ্টির জেরে মাটির বাড়ি ভেঙে দুই শিশু প্রাণ হারিয়েছে। বিভিন্ন অংশ ধসে ভেঙে যাওয়ায় পাঠানকোট-মান্ডি জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

আরও পাঁচ দিন একইভাবে ধস নামতে পারে বলে সতর্ক করেছে হিমাচল প্রদেশ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পাঁচদিন টানা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। কাংড়া, চাম্বা, মাণ্ডি, কুলু, সিমলা, সিরমাউর, সোলান, হামিরপুর, উনা এবং বিলাসপুরে তিন-চার দিন ধরে টানা বৃষ্টি হবে। রবিবার দিনভর বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি হবে হিমাচলে। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সতর্কতা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নদীর পাড়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, এদিন ভোর থেকে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় হড়পা বানে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে কমপক্ষে দশ জন নিখোঁজ। তেহরিতে দু’টি বাড়ি ভেঙে চাপা পড়েছেন অন্তত সাতজন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এই রাজ্যেও। কোঠার গ্রামে বৃষ্টির জেরে ধসে চাপা পড়ে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধার। সরখেত গ্রামে শুক্রবার রাত সোয়া দু’টো নাগাদ হড়পা বান শুরু হয়। ভেসে গিয়েছে বহু ঘর-বাড়ি। খরস্রোতা সঙ নদীর উপরে থাকা সেতু ভেসে গিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে মুসৌরির কেম্পটি ফলসের অবস্থা বিপজ্জনক। তোতাঘাটিতে ঋষিকেশ-বদ্রীনাথ জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভুটসি, লাভারকা, ধুত্তু সহ বেশ কিছু গ্রাম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হড়পা বানে। সৌজন্যে: গণশক্তি অনলাইন

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও